ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ফাইল ছবি)

ঢাকা: ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়াতে দেড় হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে না।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্র ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েই এগুনো হচ্ছে। তবে জনপ্রিয়তা এবং আস্থা তৈরির আগে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষেই কমিশন।

কেননা, সে সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম ব্যবহারের জন্য চারটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেশিন। দ্বিতীয় প্রশিক্ষিত লোকবল। তৃতীয়ত ভোটারদের অভ্যস্ততা এবং চতুর্থত ‍রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য।

চারটি বিষয়ের মধ্যে পরের তিনটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, মেশিন কেনা হলেও এগুলো ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল দরকার। ভোটারদেরও দিতে হবে সেই জ্ঞান, যা ভোটার এডুকেশন বলা হয়ে থাকে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনা।

দলগুলোকে আস্থায় আনতে এবং ভোটার এডুকেশনের জন্য অবশ্যই ইভিএম স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষিত হতে হবে। এগুলোর কোনোটিই হয়নি। যদিও ইভিএম দিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বোচ্চ দশটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করেছে ইসি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় এটা প্রায় শূন্য শতাংশের কাছাকাছি।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণের জন্য এখনো আইন করা হয়নি। সংসদ নির্বাচনের মূল আইন হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২। আরপিও সংশোধন করে সেখানে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করলেই কেবল সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্রে ভোট নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্র বলছে, ইভিএম ব্যবহারের বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু একাদশ নির্বাচনের সব মিলিয়ে সময় আছে আর মাত্র পাঁচ মাস। এ সময়েই আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং, মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন এবং সংসদে পাস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই এগুতে হবে।  

এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মেশিন তৈরির জন্যও পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন। আর পুরো কাজটি করার জন্য পাঁচ মাস সময় খুব কম। তাই এটি কোনোভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

এদিকে আরপিও সংশোধন একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে হচ্ছে না বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বলেছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে আরপিও সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হতে পারে। এজন্য ব্যবহার করা হতে পারে বর্তমানের ইভিএমগুলোই।
 
সূত্রগুলো বলছে, একাদশ সংসদে ব্যবহার না হলেও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের জন্য সব কাজ একসঙ্গেই এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। এজন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে (পিইসি) পাঠিয়েছে ইসি। রোববার (১৯ আগস্ট) পিইসি এ বিষয়ে বৈঠক করার কথা থাকলেও নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করেছে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পিইসি প্রকল্প প্রস্তাবনাটি নিয়ে ঈদের পর বৈঠক করবে। প্রকল্পটি নিয়ে আমরা আশাবাদী।

কর্মকর্তারা বলছেন, পিইসি থেকে প্রকল্প পাস না হলেও এরই মধ্যে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে সীমিত আকারে কিছু ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে ইসি। প্রকল্পটি হলে বিএমটিএফের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। আবার আরপিও সংশোধনের জন্যও আলোচনা করছে কমিশন। ঈদের পর কমিশন বৈঠকে আরপিও সংশোধনের জন্য ইভিএমের বিষয়টি তোলা হবে। এভাবেই সব কাজ গুছিয়েও নিচ্ছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, আইন সংশোধন, মেশিন ক্রয় করা হলেও আমাদের সক্ষমতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য এক লাখের বেশি ইভিএমের প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে ইভিএমের জন্য এতো লোকবল প্রশিক্ষিত করার একটা বিষয় আছে। কাজেই সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

দেশে ইভিএমে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থাটি ২০১০ সালে চালু করে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন। সে সময় লক্ষ্য ছিল স্থানীয় নির্বাচনে এ যন্ত্রের জনপ্রিয়তা অর্জনের পর সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে। তাদের ধারবাহিকতায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশনও বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সাফল্যের সঙ্গেই যন্ত্রটি ব্যবহার করে।

কিন্তু ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ইভিএম বিকল হয়। সেই যন্ত্রটি বিকল হওয়ার কারণ আর উদ্ধার করতে পারেনি রকিব কমিশন। সে সময়কার ইভিএমগুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিএমটিএফ তৈরি করে দেয়। মূলত বুয়েটের একটি প্রজেক্টের ফল ছিল ওই ইভিএম।

রাজশাহীতে ঝামেলা বাধার পর আর কোনো নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার করেনি রকিব কমিশন। তারা পরবর্তীতে প্রায় ১২শ ইভিএম নষ্ট করে ফেলে। একই সঙ্গে আরো উন্নত ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশন নতুন করে ইভিএম তৈরির দিকে এগুচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে বিএমটিএফ থেকেই যন্ত্রটি তৈরির করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। টেস্ট কেস হিসেবে বিএমটিএফের কাছ থেকে তৈরি করে নেওয়া নতুন ইভিএম দিয়েই খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৩০টির মতো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।