ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ফাঁকা মাঠে ‘গোল দিতে’ যাচ্ছেন সালাম মুর্শেদী

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৮
ফাঁকা মাঠে ‘গোল দিতে’ যাচ্ছেন সালাম মুর্শেদী আবদুস সালাম মোর্শেদী। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা: এক সময়ের ফুটবল মাঠ কাঁপানো আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবার ঝড় তুলছেন রাজীনিতির মাঠে। ঢাকা লিগে ২৭ গোল করা সেরা এ স্ট্রাইকার খুলনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন!

কৃতি এ ফুটবলার ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী রাজনীতির মাঠে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংকটে পড়েছেন।  

রোববার (২৬ আগস্ট) দুপুরে খুলনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।  খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও খুলনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও ৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর ২০ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।  

এদিকে আব্দুস সালাম মুর্শেদীসহ আরও দুইজন উপ-নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তারা হলেন- মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য ও খানজাহান আলী থানা শাখার সভাপতি এসএম আনিসুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান।  

বাকি দুইজন মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছেন সালাম মুর্শেদী।

মনোনয়পত্র জমা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সালাম মোর্শেদী বলেন, এই মুহূর্তে হয়তো আমার প্রতিপক্ষ নেই। আমি মনে করি কখনও প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবা ঠিক নয়। প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী ভেবেই আমি আমার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমি খুলনার সিনিয়র ও তৃণমূল নেতাদের নিয়ে আমার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবো। ডিসেম্বরে যে জাতীয় নির্বাচন হবে সে সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যদি আবার মনোনয়ন দেন তাহলে আমি কাজের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনবো।  

তিনি বলেন, ফুটবল ও ব্যবসায় সফলতার পর রাজনীতি আমার তৃতীয় অধ্যায়। আমি রাজনীতির মাঠে নতুন হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করবো।  

আজীবন মোহামেডান ক্লাবে খেলা সালাম মুর্শেদী নৌকার হাল ধরায় বিরোধী শিবিরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ বলছেন, মুসলীগ লীগ পরিবারের সন্তান কিভাবে রাতারাতি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন।  

এক সময়ে খালেদা জিয়ার হওয়া ভবনে আসা যাওয়া করা বিশিষ্ট শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী নৌকার দক্ষ মাঝি হিসেবে শক্ত হাতে কতটা হাল ধরতে পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।  

আব্দুস সালাম মুর্শেদী দেশের ক্রীড়ামোদী মানুষ তাকে সাবেক ফুটবলার সালাম হিসেবেই চেনেন। বর্তমানে তার পেশাগত পরিচয় তিনি একজন উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপে ২০ হাজারেরও অধিক কর্মী রয়েছে। সাবেক ফুটবলার ও ব্যবসায়ী সালাম মুর্শেদীর জন্ম খুলনায়।  

এখানেই তার ফুটবলের হাতেখড়ি। ৭০-এর দশকে খুলনার ইয়ং বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলার মাধ্যমে ফুটবলে তার যাত্রা শুরু। সত্তরের দশকের শেষ ভাগে তিনি খুলনা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান ফুটবলের খেলার উদ্দেশ্যে। সে সময় আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগে তার নতুন যাত্রা।  

পরে মোহামেডানের হয়ে ফুটবলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৭ গোল করে খুলনা জেলার মুখ উজ্জ্বল করেন তিনি। ১৯৮২ সাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙে ঢাকা লিগে ২৭ গোল করে সেরা স্টাইকারের রেকর্ড গড়েছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কৃতি ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সর্বোচ্চ গোলের সেই রেকর্ডটি আজ অবদি অক্ষুণ্ন।

জানা যায়, চলতি বছরের ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সালাম মুর্শেদী। প্রধানমন্ত্রীর খুলনার সেই জনসভায় তারকা ফুটবলার সালাম মুর্শেদী ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন।  

তবে দুদকে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানকে তলব করার পর সবাই ধারণা করেছিলেন সালাম মুর্শেদী এই আসনের আ’লীগের প্রার্থী হবেন। ২৬ জুলাই খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।  

শূন্য আসন পূরণ করতে সোমবার (২০ আগস্ট) আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।  

এ বিষয়ে দলীয় সূত্র বলছে, সালাম মুর্শেদীকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নাখোশ। তবে রাজনৈতিক কারণে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।  

তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী বলছেন, সালাম মোর্শেদীর বাড়ি খুলনা-৪ নির্বাচনী আসনে। এই আসনটি আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্তিশালী। এজন্য সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজার অবদান অনেক। সে কারণে অনেকে তার একমাত্র ছেলে জেলা পরিষদ সদস্য খালেদীন রশিদী সুকর্ণকে সংসদ সদস্য হিসেবে চেয়েছিলেন।  

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান জামাল, সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন এ আসনের প্রার্থীর দাবি জানিয়েছিলেন।

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছেন সালাম মুর্শেদী।  

ফুটবলে জাতীয় পুরস্কার এবং পোশাকশিল্পে বহুবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পাওয়া খ্যাতিমান এই শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী শুক্রবার (২৪ আগস্ট) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাতের পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতির মাঠে নামেন।  
এরপর খুলনার রূপসা নদীর তীরে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমীনের মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন তিনি।

সন্ধ্যার পর তিনি লোয়ার যশোর রোডের দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। এরপর নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাতে খুলনার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় অংশ নেন।  

শনিবার (২৫ আগস্ট) সালাম মুর্শেদী খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যদিও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি। মতবিনিময় সভায় যোগদানে আসার সময় তিনি পুলিশ ভ্যানের প্রটোকল নিয়ে আসেন।  

যা নিয়ে খুলনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। যেখানে খুলনার মেয়র প্রটোকল পান না সেখানে এমপি হওয়ার আগেই সালাম মুর্শেদী প্রটোকল পাওয়ায় নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।  

ফুটবল অঙ্গণের উজ্জল নক্ষত্র সালাম মুর্শেদী বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি, এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়:  ১৬৪২ ঘণ্টা,  আগস্ট ২৬ , ২০১৮
এমআরএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।