ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটও প্রস্তুত রাখবে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৮
ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটও প্রস্তুত রাখবে ইসি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ব্যালট পেপারও প্রস্তুতি রাখবে সংস্থাটি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী এনে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আরপিও ২৬ ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে গোপান ব্যালট ও ইভিএম উভয় মাধ্যমেই ভোটগ্রহণ করা যাবে।

এই আইন বলেই কমিশন ইভিএমে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করবে সেখানে গোপন ব্যালট পেপারও প্রস্তুত রাখবে।

মেশিনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে যেন ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্থ না হয়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা হচ্ছে। কেননা, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হলে পরবর্তীতে সেই কেন্দ্রের ভোট ব্যালটে নেওয়া হয়। এতে ফল প্রকাশে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কমিশনকে। এই পরিস্থিতি যেন সংসদ নির্বাচনে সৃষ্টি না হয়, তাই ব্যালট পেপারও প্রস্তুত রাখবে কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, ইভিএম কতটি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমাদের প্রস্তুতি ভালো। এক্ষেত্রে কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ব্যালট পেপারও প্রস্তুতি রাখবো। এতে রিস্ক মোকাবেলা করা যাবে।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, ১০ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যবহারের মতো ইভিএম আমাদের থাকবে। তবে তিনশটি কেন্দ্রেও যদি এই মেশিন ব্যবহার করতে চাই, তবে সক্ষমতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে লোকবল, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির বিষয় রয়েছে।

এদিকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের আপত্তি থাকলেও আরপিও সংশোধন করে, তাতে বেশকিছু নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলেছে।

২৬বি(১) ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন এমন ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার করবে, যা সব ধরনের নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবে। ইভিএম কোনো কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হতে পারবে না, ইন্টারনেট অথবা কোনো নেটওয়ার্কের সঙ্গেও সংযুক্ত থাকবে না এবং হ্যাক করার ব্যবস্থা থাকবে না। ইভিএম থাকবে এমন যান্ত্রিকভাবে সুরক্ষিত থাকবে, যা বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বা কারসাজি প্রতিরোধ করবে। সফটওয়্যার যুক্ত করার পর এটি বদলে ফেলা বা হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কোনো প্রকার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা ডাকা ডিকোডারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না ইভিএম। কেবলমাত্র এনক্রিপটেড এবং ডায়নামিক্যালি কোডেড ডাটা গ্রহণ করবে। ইভিএম তৈরি হবে নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত একটি নির্বাচিত গ্রুপের মাধ্যমে। সফটওয়্যারের সোর্স কোড নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।

ইভিএমের সফটওয়্যার কেমন হবে সে নির্দেশনাও আরপিওতে দেওয়া হয়েছে। আরপিও’র ২৬বি(২) ধরায় বলা হয়েছে, ইভিএমের সফটওয়্যার একজন ভোটারকে কেবল একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ দেবে। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট থেকে সহকারী প্রিজাডিং কর্মকর্তা ব্যালট সক্রিয় করে দিলেই কেবল ভোটার ভোট দিতে পারবেন। মেশিন কোনোভাবেই বাইরের কোনো সিগন্যাল রিসিভ করবে না। ভোটার চূড়ান্তভাবে ভোট দেওয়ার আগে ভুল করলে তা সংশোধনের সুযোগ পাবেন। কোন ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছেন তা শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে না।

এছাড়াও আরপিওতে বলা হয়েছে- ইভিএমের ইলেকট্রনিক ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার পর তা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জন্য রেকর্ড হয়ে থাকবে। নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল যে চিপে জমা থাকবে, তা এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।

সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবটি ৩১ অক্টোবর অধ্যাদেশ আকারে জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আগামী ৩ নভেম্বরের (শনিবার) বৈঠকে এই আইনের ওপর বিধিমালা প্রণয়নের জন্য বসছে নির্বাচন কমিশন। এতে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

দেশের ইভিএমে ভোটের প্রচলন ২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন শুরু করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে সে সময় ১২ হাজার টাকায় ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়। যে মেশিনের স্বত্ব ছিলো বুয়েটের কাছেই।

হুদা কমিশন সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচনে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পায়। তাদের পরিকল্পনাও ছিল স্থানীয় নির্বাচনে এই মেশিনের ওপর আস্থা সৃষ্টির পর ‘২০১৯ সালের’ তথা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা। কিন্তু ২০১৩ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন বিকল হয়ে যায়। যে মেশিনটি আর সচল করতে কিংবা বিকল হওয়ার কারণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে স্বত্ব না থাকায় বুয়েটও আর কোনো সহায়তা করেনি। ফলে সে সময় কেনা প্রায় ১ হাজার ২শ’ মেশিন রকিব কমিশন নষ্ট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে আরো উন্নতমানের ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নেয়।

রকিব কমিশনের সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে উন্নত মানের ইভিএম প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) চীন থেকে যন্ত্রাংশ কিনে এনে তৈরি করছে এই মেশিন। এরইমধ্যে প্রায় ৫শ’ মেশিন বিএমটিএফ তৈরি করে দিয়েছে। এর মধ্যে রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে ৪০টির মতো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করেছে। প্রতিটি ইভিএমের জন্য নির্বাচন কমিশনকে গুণতে হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। সংসদ নির্বাচনের আগেই ৮০ হাজার ইভিএম তৈরির কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।