যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার হওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) লন্ডন হাইকমিশনে আয়োজিত এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এমন পরিকল্পনার কথা জানান।
লন্ডনে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, অনলাইনে প্রবাসীদের ভোটার করে নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
তিনি বলেন, আমরা চার নির্বাচন কমিশনারকে চার দেশের দায়িত্ব দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদান সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের, রফিকুল ইসলাম যুক্তরাজ্যের, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী দুবাই এবং কবিতা খানম মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নিয়ে এনআইডি সরবরাহের বিষয় সমন্বয় করছেন।
সিইসি বলেন, যারা অন্য দেশের নাগরিক, তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে হবে। অন্যথায় ভোটার করা হবে না। এজন্য হাইকমিশন, দূতাবাসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে হবে। এটা একদম সহজ। কোনো কঠিন বিষয় নয়। আমরা চিঠি দিয়ে স্বল্প সময়ে যাতে আপনাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, তার জন্য বলবো। আর দেরি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিলেও আমরা আমলে নেবো।
তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বলেন, ইভিএম একটা নতুন প্রযুক্তি। নতুন প্রযুক্তির সমালোচনা থাকবেই। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কোনো নেতিবাচক সাড়া পায়নি।
নির্বাচন ভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, লন্ডনে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য একাকার হয়ে গেল। ভবিষ্যতে প্রবাসেই বসেই ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, যোগ্য নাগরিকদের ভোটার করে নেওয়া ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটা দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রবাসে এ কাজটি করা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে সবাই সহযোগিতা করলে এটি আমরা করতে পারবো।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের হাতে এনআইডি তুলে দেওয়া অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। ১৮ বছর বয়স হলে আমরা এনআইডি দিচ্ছি। এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদেরও আমরা এনআইডি দেওয়ার চিন্তা করছি।
জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার অসুস্থতার কারণে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
লন্ডন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, প্রবাসীদের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। আশাকরি, আগামী মার্চে এনআইডি তুলে দিতে পারবো।
তিনি বলেন, এনআইডি পাওয়ার জন্য যেসব ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে, হাইকমিশন থেকে সব সহযোগিতা করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনআইডি নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে প্রবাসেই বায়োমেট্রিক সংগ্রহসহ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
আবেদনের সঙ্গে যে সব দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে:
বৈধ পাসপোর্টের কপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসি বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম-মোবাইল নম্বর-এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দুবাই প্রবাসীদের জন্য এ কার্যক্রম শুরু করে ইসি।
তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এরই মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচিত করে ইসি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কার্যক্রমটি শুরু হবে।
বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটির মতো প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রম শুরু করলো ইসি
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
ইইউডি/ওএইচ/