ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

রাজনৈতিক দলের ওপর চোখ রাখতে পৃথক সংস্থা, শাখা চায় ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
রাজনৈতিক দলের ওপর চোখ রাখতে পৃথক সংস্থা, শাখা চায় ইসি

ঢাকা: রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন দেওয়া ও সময় সময় তাদের কার্যক্রম যাচাই করার জন্য পৃথক অথরিটি কিংবা শাখা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন না, বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে দলগুলোর খোঁজ নিতে পারে না সংস্থাটি।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার পর মনিটরিং করার জন্য যেই টুলসগুলো দেওয়া আছে, ওই ধরনের জনবল ইসির নেই।  জেলায়, উপজেলায় চেক করা কঠিন, এজন্য অনেক জনবল দরকার।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আলাদা অথরিটি রয়েছে। তাদের কাজই হলো- রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রেগুলেশন ঠিক মতো পালন করছে কিনা, এগুলো দেখা। আমাদের দেশে তো ২০০৮ থেকে নির্বাচন কমিশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য আলাদা করে অতিরিক্ত কোনো জনবল ইসির নেই। আমরা অফিসিয়াল যে আলোচনা করেছি, তাতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আলাদা অথরিটি হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর তা না হলে নির্বাচন কমিশনেই আলাদা একটা উইং করার প্রয়োজন হবে। যে উইংয়ের সারাবছর কাজই হবে যে, রাজনৈতিক দলগুলো অফিস পরিদর্শন করা, তাদের যে নিয়ম কানুনগুলো রয়েছে, যেভাবে তারা মিটিং করবেন বা সাংগঠনিক কমিটি গঠন করবে সেখানে নিয়ম পালন করলেন কি-না, তারপরে দলের নিজস্ব যে গঠনতন্ত্র আছে সেটি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তাদের আর্থিক বিষয়গুলো ঠিক মতো আছে কিনা, সেগুলো অডিট করা। এগুলো অনেক কাজ। এই কাজ করার মতো তো ওই ধরনের জনবল নেই। দলগুলো বছর বছর কিছু কাগজ দেয় ইসির কাছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়। এগুলো র‌্যানডমলি দেখা হয়। পূর্ণাঙ্গ দেখতে হলে উইং তৈরি করতে হবে। অথবা আলাদা অথরিটি লাগবে।

এই নির্বাচন কমিশনার যুক্তি তুলে ধরে বলেন, উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দু'তিন জন লোকবল ইসির। তারা নির্বাচন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, এনআইডি নিয়ে কাজ করে। কাজেই তাদের পক্ষে দলের খোঁজ-খবর রাখা সম্ভব হয় না। তবে এটা ইসির হাতে নয়। এজন্য আলোচনা দরকার।

এই বিষয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার দরকার আছে। নিজেদেরও আলোচনার দরকার আছে। তবে আমরা এটি কনসিডারেশনে নিয়েছি, অলরেডি আলাপ আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে হয় আমাদের জনবল বাড়াতে হবে, না হয় আলাদা অথরিটির কাছে দিয়ে দিতে হবে। এজন্য পার্লামেন্টেও আমরা প্রস্তাব দেবো।

এই আলোচনার মধ্যেই এবারও সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধন দেবে ইসি। এক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার বিধান রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনমুখী দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন না থাকলে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি কমিশনের কাছে উপস্থাপনের জন্য নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। কমিশন অনুমোদন দিলে যে কোনো সময় জারি হতে পারে গণবিজ্ঞপ্তি।

সর্বশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। সময় দেওয়া হয়েছিল ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬টি রাজনৈতিক দল। কে এম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।

তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।

এক-এগার সরকারের সময় ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে গত ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।

নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।

যে পাঁচ দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী নতুন দল নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত- (১) অতীতে যে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংশ্নিষ্ট দলের অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকবে হবে অথবা। (২) অতীতের কোনো নির্বাচনে দলটির অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আসনগুলোর মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে। (৩) নিবন্ধন পেতে হলে দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমিটি ও কার্যালয় থাকতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি ইউনিটে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন আছে বলে প্রমাণ থাকতে হবে। তিনটি শর্তের যে কোনো একটি অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

এছাড়া আবেদনপত্রের সঙ্গে নতুন দলগুলোকে- গঠনতন্ত্র, দলের বিধিমালা (যদি থাকে), নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের লোগো ও পতাকার ছবি, দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এর সর্বশেষ স্থিতি এবং তহবিলের উৎস ইত্যাদি তথ্যও জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।