সিলেট: সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর এবং গোলাপগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চলছে ভোট উৎসব। নির্বাচনে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে নানা সমীকরণ হচ্ছে মাঠপর্যায়ে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলেও উত্তাপে কোনো ধরনের ভাটা পড়েনি। তবে, বিএনপি ছাড়াই ভোটের মাঠে নৌকার প্রধান বাধা দলের বিদ্রোহীরা। দল থেকে বহিষ্কার হলেও নির্বাচন থেকে তাদেরকে দূরে রাখা যায়নি। এ কারণে নৌকার জয়ের ‘পথের কাটা’ বিদ্রোহীরা। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। তবে, শেষ হাসি কে হাসবেন, তা দেখতে অপেক্ষার পালা আরও কয়েক ঘণ্টার।
বিয়ানীবাজার: দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন হচ্ছে এ পৌরসভায়। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছেন ১০ প্রার্থী। বুধবার (১৫ জুন) ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হচ্ছে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্র নিরাপদ রাখতে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পৌরসভা নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পৌর এলাকায় মোট ২৭ হাজার ৭৯০ ভোটার ১০টি কেন্দ্রে স্থাপিত ৮০টি বুথে ভোট দেবেন। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৮৭০ এবং নারী ভোটার ১৩ হাজার ৯২০ জন। প্রথমবারের মতো এই পৌরসভার ভোটাররা ইভিএমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১০ প্রার্থীর অধিকাংশই প্রবাসী। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জন, যুক্তরাজ্যের ২ জন ও কানাডার ১ জন। মেয়র পদে স্বতন্ত্র ৭ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ফারুকুল হক (চামচ), আরে বিদ্রোহী মো. আব্দুল কুদ্দুছ (হেলমেট), স্বতন্ত্রের মধ্যে আছেন আহবাবুর রহমান (কম্পিউটার), আব্দুস সামাদ আজাদ (হ্যাঙ্গার), মোহাম্মদ অজি উদ্দিন (নারিকেল গাছ) মোহাম্মদ আব্দুস সবুর (মোবাইল ফোন), সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (জগ) প্রতীকে। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুস শুকুর (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) মো. সুনাম উদ্দিন (লাঙ্গল), এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মোহাম্মদ আবুল কাশেম (কাস্তে) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় বিদ্রোহী প্রার্থী বিয়ানীবাজার কলেজের সাবেক জিএস ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকুল হক ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুস টিটুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্বাচনে আবদুস শুকুরের জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফারুকুল হক ও আবদুল কুদ্দুস টিটু। এ দুইজন প্রার্থী না হলে আবদুস শুকুর সহজেই জয় পেতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে, শেষ পর্যন্ত ভোটাররা নির্ধারণ করবেন প্রার্থীদের ভাগ্য।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনে চর্তুমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন- নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুস শুকুর, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক, সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুস ছবুর। এই ৪ প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে!
গোলাপগঞ্জ: এ উপজেলায় দুই প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মঞ্জুর কাদির শাফি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ঘোড়া প্রতীকে দলের বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সফিক উদ্দিন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাইদুর রহমান বলেন, উপজেলায় ২ লাখ ৪০ হাজার ১শ জন ভোটার ১০২টি কেন্দ্রে ৬২৫টি কক্ষে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। মোট ভোটারের ১ লাখ ২২ হাজার নারী এবং ১ লাখ ১৮ হাজার ৩ পুরুষ রয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভোটার উপস্থিতি হলে এখানে নৌকার প্রার্থীর বিজয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে ভোটার উপস্থিতি কম হলে সমীকরণ উল্টে যেতে পারে। তবে, শেষ ভোটের মাঠে নৌকাকে এগিয়ে রাখছেন স্থানীয়রা।
ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রচারণায় ঘাটতি থাকায় প্রথম অবস্থায় নৌকার প্রার্থীর অবস্থা টালমাটাল ছিল। শেষ বেলায় জরিপে নৌকা অনেক দূর এগিয়েছে।
ভোটারদের ভাষ্যমতে, প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থী মঞ্জুর কাদির সাফিকে এগিয়ে রাখছেন তারা। কেননা, রাজনীতি থেকে সমাজনীতিতে তার অবদান বেশি। তার ভাই প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরীর কারণে রাজনীতি সক্রিয় ছিলেন না। হলফনামায় নিজে স্বশিক্ষিত লিখলেও শিক্ষাবিস্তারে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। কোটিপতি হলেও সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে সমাদৃত হয়েছেন সর্বমহলে। কেবল গত ৪ বছর ধরে মানুষের পাশে ছিলেন সেবক হয়ে। করোনাকালে মানুষের সহায়তায় ছিলেন একাগ্রচিত্ত।
পক্ষান্তরে, সে সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সফিক উদ্দিন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। কেবল বিগত দিনের ছাত্র রাজনীতির ক্যারিয়ার দিয়ে এলাকায় পরিচিত তিনি। তবে, সব কথার শেষ হলো, ভোটাররা কাকে গ্রহণ করছেন, তা দেখতে অপেক্ষায় ক্ষণ গণনার পালা।
প্রশাসন সূত্র জানায়, টান টান উত্তেজনার মধ্যে প্রবাসী অধ্যুষিত এ দুই অঞ্চলে ভোটের মাঠে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার ১০ কেন্দ্রের ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়ে। আর গোলাপগঞ্জে ১০২ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৩টি। ফলে কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তায় থাকছেন ১ হাজার ২৫৫ পুলিশ। পাশাপাশি ২ হাজার ৪২১ আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
এনইউ/এএটি