ঢাকা: সদ্যপ্রয়াত আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর আসনে নৌকার হাল ধরতে চান অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য জামাল হোসেনকে নিয়ে আশা করছেন ফরিদপুর-২ আসনের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।
সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে ভোট হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে এরই মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামাল হোসেন মিয়া। আগামী মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ।
মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিলে নগরকান্দা ও সালথার অবহেলিত জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে নিজেকে উজাড় করে দেব।
আত্মবিশ্বাসী জামাল হোসেন বলেন, ভোটের মাধ্যমে জনগণ বুঝিয়ে দেবে সত্যিকারের নেতাকে। দীর্ঘদিন ধরে আমি জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও শান্তির বার্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। মূলত আমি নগরকান্দা-সালথার জনগণের ইচ্ছায়ই রাজনীতি করি। তাদের ভালোবাসা ও সমর্থন আমাকে এ পর্যন্ত এনেছে। আমি বরাবরই জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করি এবং করতে চাই। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনই আমার রাজনীতির একমাত্র শক্তি। জনগণ সেটা ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবে বলে আশা করি।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান আরও অনেকে। তবে নানা ইতিবাচক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন জামাল হোসেন মিয়া। তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীদের দুর্দিনে পাশে থেকে তাদের মন জিতেছেন। বিশেষ করে একদম তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীর নামও মনে রাখেন তিনি। এতে কর্মীরা প্রাণচঞ্চল ও উজ্জীবিত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের প্রত্যাশা, জামাল হোসেনই পারবেন সাজেদা চৌধুরীর আসনে নৌকার হাল ধরতে।
জানা গেছে, জামাল হোসেন মিয়া ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংসদের জিএস ছিলেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং জারিন কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালক, ফরিদপুর জেলা শেখ জামাল ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্য, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, তার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সহিদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় নগরকান্দা উপজেলার কমান্ডার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নগরকান্দা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জামল হোসেনের মা দেলোয়ারা বেগমও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার ভাই কামাল হোসেন মিয়া। বোন রিক্তা আক্তার নগরকান্দা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী পরিবারে বেড়ে ওঠা জামাল হোসেন সব সময় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ছুটছেন উপজেলার শহর থেকে গ্রামে। শুধু রাজনীতিতেই নয়, সামাজিক কাজেও উপজেলাব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। দেশের নানা ক্রান্তিকালে মানবিকসেবা দিয়ে তিনি এরই মধ্যে নগরকান্দা-সালথার গণমানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রতিনিয়তই।
জানা গেছে, করোনার প্রকোপে যখন জনজীবন স্থবির হয়ে গিয়েছিল, তখন প্রায় ১১ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন জামাল। করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। এ ছাড়াও প্রতি বছর রমজানে প্রায় দুই হাজার পরিবারের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। এছাড়া প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় তিন হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং পাঁচ হাজার অসহায় পরিবারের মধ্যে নতুন পোশাক বিতরণ করেন জামাল।
এ ছাড়াও এলাকার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন তিনি। জামাল শীতে দরিদ্র শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ ছাড়াও এলাকার ভাঙা রাস্তা মেরামত ও সাঁকো, পুল এবং মাটির রাস্তা নির্মাণ করে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁশের সাঁকো, মাটির কাঁচা রাস্তা, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, স্কুল নির্মাণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এককালীন নগদ অর্থ সহায়তা করেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও দুই উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছেন জামাল হোসেন। সামাজিক নানা উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত তিনি। উপজেলার গৃহহীনদের কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন জামাল।
প্রত্যন্ত ইউনিয়নগুলোর মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, করোনাকালে কর্মহীনদের মধ্যে চাল, আলু বিতরণ, আগুনে পোড়া পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান, অসুস্থ ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করে এলাকায় আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
এসআই