ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

জলঢাকা থেকে মফিজুল সাদিক

ভোটের লড়াইয়ে মামার নৌকা, ভাগ্নের নারকেল গাছ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
ভোটের লড়াইয়ে মামার নৌকা, ভাগ্নের নারকেল গাছ ছবি: দিপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জলঢাকা(নীলফামারী) থেকে: পিক-আপ ভানের ওপরে বসানো হয়েছে বড় বড় সাউন্ড বক্স। এর সামনে ও পেছনে সাটানো হয়েছে নৌকা প্রতীক সম্বলিত পোস্টার।

ভোটারদের কাছে টানতে সাউন্ড বক্সে নানা ধরনের গান বেজে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।

এর পাশাপাশি বলা হচ্ছে, ‘বাহাদুর ভাইয়ের সালাম, নিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন’।
 
এর কিছুক্ষণ পরে আবার মাইকে ভেসে আসছে, ‘সামনে আসছে শুভ দিন, বাবলু ভাইকে নারকেল গাছ মার্কায় ভোট দিন’।
 
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই নতুন মাত্রা নিয়েছে নীলফামারী জেলার জলঢাকা পৌরসভার প্রচার-প্রচারণায়। আওয়ামী ও বিএনপির প্রার্থীরা আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন তাদের জন্য বরাদ্দ নৌকা ও ধানের শীষ। তাই ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে সাটানো হয়েছে এসব পোস্টার।

এছাড়া স্বতন্ত্র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেককে কাঙ্খিত প্রতীক পেয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে। জলঢাকা পৌরসভায় শুরু হয়ে গেছে মামা আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুরের নৌকা ও ভাগ্নে বর্তমান মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলুর নারকেল গাছ মার্কার লড়াই। একে অপরে বাকযুদ্ধেও নেমে পড়েছেন। জনপ্রিয়তায় কেউ কোনো অংশে কম নয়।

প্রতীক বরাদ্দের পর পরই ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছেন মামা ও ভাগ্নে।

ভাগ্নে বর্তমান মেয়র বাবলু। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে পৌরসভায় নৌকা নিয়ে লড়াই করছেন বাহাদুর।
 
খ শ্রেণীর পৌরসভা জলঢাকা। মোট  জনসংখ্যা ৮১ হাজার ৩৮৫ জন। ৯টি ওয়ার্ড মিলিয়ে পৌর এলাকার  মোট ভোটার সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫২৭ জন।
 
জলঢাকা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমিনুল। কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান মেয়র অনেক উন্নয়ন করেছেন। নারকেল গাছ মার্কায় ভোট দেবো’।
অন্যদিকে ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিধান চন্দ্র রায় বলেন, ‘হামরা নৌকার লোগ, নৌকাত ভোট দেমো’।

অনেক ভোটার আবার নীরবও রয়েছেন।
 
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বাহাদুর বলেন, ‘দেশে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সেই জোয়ারে মানুষ এবার নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। বর্তমান মেয়র (ভাগ্নে বাবুল) কোনো কাজ করেননি। পৌরসভার কোনো উন্নয়ন নেই। আমাকে ভোটে নির্বাচিত করলে নগরীর রাস্তাঘাটসহ বিনোদন পার্কের উন্নয়ন করবো। আধুনিক স্টেডিয়ামসহ ম্যূরালসহ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবো’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে কাঁচামালের বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে। বাজারটি উন্নয়নে আমি কাজ করবো’।

কাকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। কিন্তু আমার নিজের লোক (ভাগ্নে বাবুল) আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। হঠাৎ করে জাতীয় পার্টি থেকে কৃষক লীগে যোগ দিয়ে তিনি নৌকা প্রতিক চেয়েছিলেন। কিন্তু নেত্রী(শেখ হাসিনা) আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন’।
 
মামার বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন ভাগ্নে বর্তমান মেয়র বাবলু।

মামা প্রসঙ্গে ভাগ্নে বলেন, ‘মামা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এখনও সাড়ে তিন বছর ক্ষমতা থাকা সত্বেও তার (মামা) ভাগ্নের চেয়ারের দিকে লোভ হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানে কিছু খাইতে না পেরে পৌরসভা মেয়র পদ নিতে ব্যস্ত। তিনি ভেবেছেন, পৌরসভায় হয়তো অনেক টাকা’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘মামা আমার নেতাকর্মীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সঠিকভাবে ভোট হওয়া নিয়ে আমার সন্দেহ আছে’।
 
কাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মামার সুরে সুর মিলিয়ে বাবলু বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রার্থীকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছি’।
 
অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে ফাহমদি ফয়সাল কমেট চৌধুরী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহ আব্দুল কাদের চৌধুরী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শরফিল ইসলাম এবং জামায়াতের পৌর আমির মকবুল হোসেন জগ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।
 
অনেকে বলছেন, জলঢাকা পৌরসভায় ত্রিমুখী লড়াই হবে। দুই নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার কাজী বশির আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে নৌকা, ধানের শীষ ও নারকেল গাছের লড়াই হবে’।

অন্যদিকে সরকার দলীয় প্রার্থী নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন বিএনপির প্রার্থী। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না বলেও শঙ্কিত তিনি।
 
ভোট প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী ফাহমদি ফয়সাল কমেট চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক মেয়র আনোয়ারুল হক কবির চৌধুরীকে পৌরসভার জনগণ ভালোবেসে ভোট দিয়ে দুইবার মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আশা করি, একইভাবে ভোট দিয়ে পৌরবাসী এবার আমাকে নির্বাচিত করবেন’।
 
‘তবে সরকার দলীয় প্রার্থী বলে বেড়াচ্ছেন, নৌকা প্রতীক একটি ভোট পাইলেই তারা মেয়র হবেন। আমার কর্মীকে নৌকার প্রার্থী নানা ধরনের ভয়-ভীতিও দেখাচ্ছেন’- অভিযোগ তার।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইকে স্লোগান ও পোস্টারে এক ধরণের উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বিএনপি, লাঙ্গল ও ধানের শীষের প্রার্থী পোস্টার সাটিয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পোস্টার সাটানোর সময় না পেলেও প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই মাইকে পৌরবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

** প্রার্থী-কর্মীর ঘুম হারাম, দলের কার্যালয়ই ঠিকানা

** নির্বাচনী উষ্ণতায় ফিকে উত্তরবঙ্গের শীতও!
** দুর্নীতিতে ভুগছে বিএনপি, কোন্দলে আ’লীগ
** ‘নাম্বার ওয়ান বানাবো পঞ্চগড় পৌরসভাকে’
** ইমিগ্রেশন চালু হবে বাংলাবান্ধায়, চলছে অবকাঠামো উন্নয়ন
** ভোটে ঝোপ বুইজে কোপ দিবো ব্যাটা’
** ‘উন্নয়নের প্রতীক নৌকা’, ‘প্রতিবাদের ধানের শীষ’
** ‘হাম জিসকো চাহেঙ্গে! উসিকো ভোট দেঙ্গে’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।