ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজিনা। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘ফিরে দেখা’য় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন নিরব ও স্পর্শিয়া। মুক্তিযুদ্ধের গল্পনির্ভর এ সিনেমার পরিচালনার পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোজিনা নিজেই। তার বিপরীতে দেখা যাবে ইলিয়াস কাঞ্চনকে।
সিনেমাটির মুক্তির বিষয়ে রোজিনা বলেন, আসছে ৩ মার্চ মাসের সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এর আগে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সিনেমাটির প্রচারণা শুরু করবো।
‘ফিরে দেখা’র দর্শক গ্রহণ করবে-এমনটিই প্রতাশ্যা আশির দশকের দর্শকপ্রিয় এ নায়িকার। তিনি বলেন, যে গল্প নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছি, সেখানে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমার দর্শক তো আছেই, এখনকার সময়ের অনেকেই ইউটিউবে আমাদের সেইসব সিনেমা দেখে, চেনে, জানে- এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি বলবো- যারা আমার সিনেমা দেখেছেন তারা পরিবার নিয়ে ‘ফিরে দেখা’ দেখতে পারবেন। সবাই সিনেমাটি দেখবেন।
নির্মাণের পাশাপাশি অভিনয়- বিষয়টি উল্লেখ করে রোজিনা বলেন, অনেকদিন পর পর্দায় হাজির হচ্ছি। আমি নিজে অভিনয় করেছি, ইলিয়াস কাঞ্চন আছেন, নিরব, স্পর্শিয়াসহ অনেক শিল্পী রয়েছে সিনেমাটিতে। আপনারা যদি হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেন তাহলে পরবর্তী সিনেমা বানাতে পারবো।
দীর্ঘদিন পর রোজিনা-কাঞ্চন জুটিকে পর্দায় দর্শকরা গ্রহণ করবে কিনা? এমন প্রশ্নে ‘হিসাব চাই’ সিনেমার এ নায়িকা বলেন, সবাই তো চিনে রোজিনা-কাঞ্চনকে। আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের সিনেমা যারা দেখেছেন অনেকেই বেঁচে আছেন। তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই আমাদের সিনেমা দেখেছেন। আমার মনে হয় না যে, কাঞ্চন-রোজিনাকে দর্শকরা চিনতে পারবে না! আমার মনে হয়, আমাদের জুটিকে দর্শক সানন্দেই গ্রহণ করবে।
নতুন আরেকটি সিনেমার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন রোজিনা। এ বিষয়ে গুণী এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, নতুন একটি স্ক্রিপ্ট শেষ করেছি। এটি লিখেছেন ছটকু আহমেদ। গল্পের নাম দিয়েছি ‘এখনই সময়’। মূলত এটি যৌতুক বিরোধী একটি গল্প। আগে ‘ফিরে দেখা’ মুক্তি পাক, তারপর এটা নিয়ে কাজ করবো।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে অনেকেই বিভক্তি করেন। নাটকের ও সিনেমার শিল্পীদের এ বিভক্তির বিষয়ে রোজিনা বলেন, এটাতো চলচ্চিত্রের পুরস্কার। এটা কাকে দেওয়া হচ্ছে, চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মানুষকেই তো দেওয়া হচ্ছে। নাটক কিংবা চলচ্চিত্র মূল বিষয়তো অভিনয়, শুধু নামটা ভিন্ন। তাই এটা নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। কে কি বলছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। ডলি জহুর আপা ও ইলিয়াস কাঞ্চন আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। জুড়ি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই, তারা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিজের জন্মস্থান রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন রোজিনা। তুরস্কের নকশায় নির্মিত এ মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে রোজিনার মায়ের নামে (দশ গম্বুজ খাদিজা জামে মসজিদ)। পাশেই একটি চক্ষু হাসপাতাল করার চিন্তা আছে এ অভিনেত্রীর।
তিনি জানান, শিগগিরই সেটিরও কাজ ধরতে চান তিনি। তার ভাষ্য, মরে গেলে কিছুতো থাকবে না। মানুষের জন্য কিছু করে গেলেই সেটিই থেকে যাবে। তাই মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই।
১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রোজিনা। এফ কবীর পরিচালিত ‘রাজমহল’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর অসখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
ক্যারিয়ারে অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন রোজিনা। তার অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘সাহেব’, ‘তাসের ঘর’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘হিসাব চাই’, ‘বন্ধু আমার’, ‘কসাই’, ‘জীবনধারা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এনএটি/জেএইচ