না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার প্রবীণ অভিনেতা ‘রঙিন নবাব’ খ্যাত প্রবীর মিত্র (৮৩)। খ্যাতিমান অভিনেতার জানাজা ও দাফনের খবরে সিনেপ্রেমীদের অনেকে বিস্মিত।
কারণ, সনাতন ধর্মে জন্ম নেওয়া ব্যক্তির দাফন কেন ইসলাম রীতিতে হচ্ছে প্রশ্ন অনেকের। তবে তারা জানেন না যে, বিয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র। নিজের নাম রেখেছিলেন ইমাম হাসান।
বিষয়টি খোলাসা করেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরও। তিনি বলেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলমানই ছিলেন।
প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলামও সেটি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রোববার রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হয়েছে। সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন প্রবীর মিত্র নিজেই। সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি। ’
প্রবীর মিত্রের স্ত্রীর নাম অজন্তা। ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন— মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম ও সামিউল ইসলাম। ছোট ছেলে সামিউল ২০১২ সালে ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রবীর মিত্র ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় এক কায়স্থ পরিবারে জন্ম নেন। তার বাবা গোপেন্দ্র নাথ মিত্র এবং মা অমিয়বালা মিত্র। বংশপরম্পরায় পুরোনো ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা প্রবীর মিত্র।
পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিনয় শুরু করেন প্রবীর মিত্র। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবর পরিচালত ‘জলছবি’ সিনেমাতে চিকিৎসকের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সূচনা হয় তার। এরপর একই পরিচালকের ‘জীবন তৃষ্ণা’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কেবল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
অভিনয়ের বাইরে প্রবীর মিত্র ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলেছেন, ছিলেন অধিনায়ক। একই সময় তিনি ফার্স্ট ডিভিশন হকি খেলেছেন ফায়ার সার্ভিসের হয়ে। এ ছাড়া কামাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন।
নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রবীর মিত্র। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
এসএএইচ