ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বিশ্ব আসরে প্রশংসিত কোরিয়ান সিনেমা ‘প্যারাসাইট’

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
বিশ্ব আসরে প্রশংসিত কোরিয়ান সিনেমা ‘প্যারাসাইট’

এবার বিশ্বের শীর্ষ সব চলচ্চিত্র পুরস্কারে আন্তর্জাতিক বিভাগে সর্বাধিক পুরস্কার পাচ্ছে কোরিয়ান সিনেমা ‘প্যারাসাইট’। সবশেষ বাফটা অ্যাওয়ার্ডেও শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার সিনেমা ও মৌলিক চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জিতেছে সিনেমাটি। অস্কারেও মনোনয়ন পেয়েছে ছয়টি বিভাগে। স্বাভাবিকভাবেই চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহ দেখা দিয়েছে, ‘প্যারাসাইট’র বিশেষত্ব কী?

বং জুন-হো  পরিচালিত নন্দিত কোরিয়ান সিনেমা ‘প্যারাসাইট’ (২০১৯)-এ অভিনয় করেছেন সং কাং-হো, চো উ-শিক, পার্ক সু-দান প্রমুখ।

এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন পুরস্কার জিতেছে এই সিনেমা।

ঠিক কতটা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে পারলে একটি কোরিয়ান সিনেমা সর্বস্তরে এরকম সমাদর আদায় করে নিতে পারে, সেটা ভেবেই বিস্মিত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।  

মূল রহস্যটা হলো, বং জুন-হো অন্যান্য বিদেশি ছবির ধারা অনুকরণ করেননি। নিজের মাটির গল্প বলেছেন। যে গল্পটা সর্বকালীন। যে কোনও দেশের, যে কোনও পটভূমিতে তা বলা যেতে পারত। এটাই ‘প্যারাসাইট’-এর সার্থকতা।  

পরিচালক তার সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পারিবারিক গল্প বুনেছেন থ্রিলারের সুতোয়। একটি পরিবারের চার সদস্য। বাবা-মা ও ভাই-বোন। প্রত্যেকেই কাজের খোঁজে, কোনও রকমে দিন গুজরান করে। একদিন পরিবারের ছেলেটির ভাগ্যে একটি টিউশন জোটে। তার পরিবারের বাকিরা সেই উচ্চবিত্ত বাড়িতেই একে একে ঠাঁই খুঁজে নেয়। যেটা অবশ্যই সোজা রাস্তায় হয় না। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ‘পরজীবী’ হওয়ার অজুহাত বদলে যায় যুক্তিতে। ওই উচ্চবিত্তের আশ্রয়ে দিব্যি চলতে থাকে তাদের সংসার। কিন্তু একটি রাত সব হিসেবনিকেশ বদলে দেয়। ফের শুরু হয় টিকে থাকার লড়াই।

‘প্যারাসাইট’র পোস্টারে অভিনেতাদের চোখে কালো টেপ। ছবিতে তেমন কোনও দৃশ্য নেই। ছবিটা আসলে প্রতীকী। চোখে অদৃশ্য ঠুলি তো আমাদের সকলেরই। যে কারণে একই সমাজে উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তের অনায়াস সহাবস্থান হয়। উচ্চবিত্ত খুশি হয়, নিম্নবিত্ত তাদের গণ্ডি ডিঙিয়ে অনধিকার চর্চা করছে না বলে। শুধু তাদের গরিবি-গন্ধটাই থেকে থেকে ঝাপটা মেরে অস্বস্তি তৈরি করে তাদের।  

কোরিয়ান সিনেমা সত্যিটা বরাবরই রূঢ়ভাবে দেখায়। যে মাটির তলার ঘরে ওই নিম্নবিত্ত পরিবারটি বাস করে, তা তাদের সামাজিক অবস্থান বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। বৃষ্টির জলে সব ভেসে গেছে। প্যান থেকে উঠে আসছে দুর্গন্ধময় পানি। তার উপরে উঠে বসে বাড়ির মেয়েটি নিশ্চিন্তে সিগারেট ধরায়। সে জানে, ওটাই ভবিতব্য। যে কারণে দিনের খাবার জুটবে কি না ঠিক নেই, কিন্তু সকলের চিন্তা চোরাই ওয়াই-ফাইয়ের সিগনাল কেন জুটছে না! 

এ সিনেমায় রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিলেও, যুব সম্প্রদায় যে ইংরেজির মোহে কাতর, সে বার্তাও পরিচালক দিয়েছেন। আমেরিকা থেকে কেনা জিনিস নিশ্চয়ই সেরা হবে, এমন ভাবনা সমাজের সব স্তরেই। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বৈরিতাও উঠে এসেছে। দু’ঘণ্টা ১৪ মিনিটের সিনেমার কোনও জায়গা অতিরিক্ত মনে হবে না। অস্তিত্বের সংগ্রামের সঙ্গে থ্রিলারের উপাদান শক্ত করে কাহিনির ভিত ধরে রাখে।

‘প্যারাসাইট’ কোরিয়ান সিনেমার ধারা বজায় রাখলেও, চরিত্রগুলি আমাদের চেনা। এ ছবির গ্রহণযোগ্যতা এর শিকড়েই ন্যস্ত। তাই সিনেমাটির চরিত্রগুলোর নাম ততটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি, যতটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এর গল্প ও নির্মাণশৈলী।

দেখুন ‘প্যারাসাইট’ (২০১৯) ট্রেলার:

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।