ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়ার ৪ বছর

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়ার ৪ বছর আইয়ুব বাচ্চু, ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর, এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু চলে যাওয়ার চার বছর। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যান্ড সংগীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র।

রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন, কিন্তু আজও আইয়ুব বাচ্চু প্রাণবন্ত হয়ে আছেন ভক্তদের হৃদয়ে। আছেন রোজকার চর্চায়।  

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৬ সালে কলেজ জীবনে আগলি বয়েজ নামক ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয় তার।  

১৯৭৭ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডে যোগদান করেন এবং এই দলটির সঙ্গে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। একই বছরে তিনি জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সোলস-এর প্রধান গীটারবাদক হিসেবে যোগদান করেন। সোলসের সঙ্গে তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন।

১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করে আইয়ুব বাচ্চু। যা পরে লাভ রান্স ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এল আর বি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি তার মৃত্যু অবধি ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিলেন।

আইয়ুব বাচ্চু তার এই পথ চলায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম শীর্ষ তারকা হয়ে উঠেছিলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। ভক্তরা তাকে নাম দিয়েছিল ‘বস’। মূলত রক ঘরানার গান করতেন। ব্যান্ডসংগীতের প্রতি তারণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

তবে শুধু রক বা ব্যান্ডের গানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না আইয়ুব বাচ্চু। আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। খুব অল্প গান করেছিলেন চলচ্চিত্রে। সেই গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক। তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। এটি ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। তবে সফলতা শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে।  

পরে ১৯৯৫ সালে ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি প্রকাশ করেন আইয়ুব বাচ্চু, যা প্রচুর সফলতা অর্জন করে। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো- ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।

এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি ১৯৯২ সালে ‘এলআরবি ১’ এবং ‘এলআরবি ২’ বাংলাদেশের প্রথম ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম ‘সুখ’ প্রকাশ হয় ১৯৯৩ সালে। যা ছিল অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম। এর পর ধারাবাহিকভাবে অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে কেবল সফলতাই পেয়েছে এলআরবি।

দলটির অনান্য অ্যালবামগুলো- ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের’ (১৯৯৮), ‘বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২), ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ (২০১৬)।

ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী ও জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। এরমধ্যে রয়েছে- ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সুখের এ পৃথিবী’, ‘ফেরারি মন’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘কবিতা’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি, ‘তিন পুরুষ’, ‘যেওনা চলে বন্ধু’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘তিন পুরুষ’সহ অসংখ্য গান।

ব্যক্তি জীবনে আইয়ুব বাচ্চু ১৯৯১ সালের ৩১শে জানুয়ারি তার বান্ধবী ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।