ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

বিনোদন

অনেক লোকগান লালনের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়: ফরিদা পারভীন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
অনেক লোকগান লালনের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়: ফরিদা পারভীন

ঢাকা: বাংলার বহু লোকসংগীত সাধকের গান সাধক লালন সাঁইজির গান বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এক প্রশিক্ষণ কক্ষে বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থা আয়োজিত ‘বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বাউল ও লোক দর্শন’ শিরোনামে সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফরিদা পারভীন বলেন, অনেক গান লালন সাঁইজির বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা ১০০ ভাগ সত্যি। দুদ্দু শাহ, পান্থ শাহদের আমলে এমন অনেক মরমি কবি ছিলেন, যারা লালনের গান নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের বের করতে হবে, কোনটি লালনের সঠিক গান। আমরা সেক্ষেত্রে উপেন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘বাংলার বাউল’ ও মনির উদ্দিন শাহ-এর যে লালনগীতি সংকলন রয়েছে, সেটিকে রেফারেন্স হিসেবে নিতে পারি।

তিনি আরও বলেন, লালন সাঁইজি মানবকল্যাণের জন্য তার বাণী বা কালামগুলো ৩০০ বছর আগে মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাউল শফি মণ্ডল।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মার্কিন গবেষক ড. কিথ এডোয়ার্ড কান্তে বলেন, সংগীত, সংস্কৃতি, সাধনা- কত দিক আছে বাউল সংগীতে। লালনের প্রভাব অনেক বেশি এশিয়ার ভাব-দর্শনে। বিশ্বের জন্য তিনি ও তার দর্শন উপহার স্বরূপ।

লোকসাধক বিজয় সরকারের ছেলে কাজল কুমার অধিকারী বলেন, সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনা নির্মাণ করেছে লোকসংস্কৃতি। গ্রামে গ্রামে রেনেসার প্রসার ঘটিয়েছে বাউল-কবিরা। মানুষে মানুষে বিভেদ কমিয়েছে বাউল।

ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন কাকলী ধারা মণ্ডল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

তিনি বলেন, বাংলার বাউল সংগীত পেয়েছে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের মর্যাদা। একে সংরক্ষণ ও বিকাশে ভুমিকা রাখতে হবে সবার।

লোকসংগীত গবেষক আবদেল মান্নান বলেন, বাউল দর্শনের এক চরম পর্যায়, একে প্রচলিত ধর্ম দ্বারা শুদ্ধিকরণে প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বাউলদের বাণী কোথাও লিখে রাখা হয়নি, ভক্তরা মনে রেখেছে। সুরে সুরে গেয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মনে রাখার সুবিধার জন্য।

ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসে লোকসংগীত গবেষণা করতে গিয়ে এখানেই থেকে গেছেন দেবোরা জান্নাত।

তিনি বলেন, বাউলের হাতে একতারা। এটা মানবদেহের প্রতীক। লালন কোথাও বাউল শব্দের উল্লেখ করেননি। গায়ক এবং গবেষকদের সাধন ও সাধক বুঝতে হবে। সাধক প্রকৃতি। প্রকৃতিকে বুঝতে পারতে হবে ভক্তিহীন গানের কী মূল্য?

আয়োজকরা জানান, এবার দুদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ফরিদা পারভিন, শফি মণ্ডল, টুনটুন ফকির, পাগলা বাবলু, সমির বাউল ও পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা তরুণরা অংশগ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থা শুক্রবারের আয়োজনে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো
বাংলাদেশের বাউল ও লোকগানকে বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রসার ও সংরক্ষণ।
লোক ও বাউল অঙ্গনের সব পদকর্তার জীবন এবং কর্ম তুলে ধরে তাদের দর্শন ও সৃষ্টিকে সার্বজনীনভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা।
বাউল ও লোকগানের মাধ্যমে বাঙালির জাতীয় জীবনদর্শনকে তুলে ধরে নানা আঙ্গিকে গবেষণা করে সাধক ও লোককবিদের সৃষ্টিকে সংরক্ষণ করা।
অঞ্চলভিত্তিক ম্রিয়মান সাধক কবি ও তাদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া পদ/গানগুলোকে ঠিক রেখে অঞ্চলভিত্তিক বাউলদের সম্পৃক্ত করে একটি অডিও এবং ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ তৈরি করা।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ ও প্রসিদ্ধ লোকসাধক, শিল্পী-গবেষক, লেখকদের ওপর ডকুমেন্টারি তৈরি করে তা সংরক্ষণ করে তাদের জীবনদর্শন ও গায়নশৈলীকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
আন্তঃমহাদেশীয় লোকসঙ্গীতের সাধক ও লোককবিদের সন্নিবেশ ঘটিয়ে সঙ্গীতের তুলনামূলক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও প্রদর্শন করে দেশীয় লোকভাণ্ডার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।