মৌলভীবাজার: কোনো হাওর বা বিল নয়, নয় কোনো জলাভূমি। চা গাছের উপরে চরে বেড়াচ্ছে বক! একটি দুটি নয়, সদলবলে অনায়াসে চা গাছে চরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে সারস প্রজাতির পাখিগুলোকে।
এই প্রজাতির পাখি সাধারণত দলগতভাবেই বিচরণ করে থাকে। কোনো জলাশয়ে খাদ্যের সন্ধানে নেমে পড়লে দলগতভাবেই নামে তারা। তবে মাঝে মাঝে ওদের একাকী কিংবা জোড়ায় দেখা যায়।
সম্প্রতি চা গাছের উপরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল বক পাখিগুলোকে। চা গাছের ডালপালাগুলোর উপর হেলে-দুলে চলছে তারা। জলাশয়ে যেভাবে দ্রুত গতিতে ওরা ঘুরে বেড়াতে সক্ষম, এখানে ততটা নয়। এখানে ওদের বিচরণের গতিপ্রকৃতি কিছুটা ভারসাম্যহীন। কিছুটা জড়তাময়। হঠাৎ ভয় পেলে বা আতঙ্কগ্রস্ত হলে দ্রুত উড়ে যাবার উপক্রম।
এগুলোকে ‘গো-বক’ বা ‘গো-বগা’ বলে ডাকা হয়। এদের ইংরেজি নাম Cattle Egret এবং বৈজ্ঞানিক নাম Bubluleus ibis। আমাদের গৃহপালিত গরুর শরীর থেকে ওরা ‘আঠালি’ নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র পোকা ঠোঁটের আগা দিয়ে ধরে ধরে খায়। এজন্যই গরুর নামানুসারেই ‘গো’ শব্দটি যুক্ত হয়ে গো-বক হয়েছে। অর্থাৎ এই পাখিগুলো গাভীপতঙ্গভুক।
এ পাখিগুলো আমাদের বাংলার প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। চিরচেনা বাংলাকে খুঁজে পেয়ে এই পাখিদের স্বেতশুভ্র দৈহিক শোভা আমাদের দুরন্ত গতিময় শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়। সে এক দারুণ নস্টালজিয়া! হাওর-বাওর, খাল-বিল, নদী-নালা, ছড়া-ঝর্ণাসহ সর্বত্র তাদের উপস্থিতি। সবাই ‘বকপাখি’ নামেই চেনেন।
কিন্তু এই বকের রয়েছে অনেক প্রজাতি। গো-বক, মাঝলা-বগা, বড়-বগা প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন সব নাম। আকৃতিতেও রয়েছে ভিন্নতা। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে সুস্পষ্টভাবে বকের প্রজাতিগুলোকে শনাক্তকরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
এই গো-বকগুলোই এখন খাদ্যের সন্ধানে চা-বাগানের চা গাছের উপরে চরে বেড়াচ্ছে। এ যেন অন্য এক বিস্ময়!
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এই ক্যাটল-ইগ্রেটরা মূলত ইনসেক্ট (পোকা) খাওয়ার জন্যই চা গাছে আসে। এরা মূলত পোকাখেকো প্রাণী। মূলত ইনসেক্টই খায়। দেখবেন যে ময়লার ভাগাড়ে মাছি, ব্যাঙ, অন্যান্য পোকামাকড় ইত্যাদি রয়েছে সেগুলো ওরা খায়। কোনো কোনো সময় বিল-জলাশয়ে গিয়ে আবার মাছ ধরেও খায়।
একটি বৃক্ষের কথা উল্লেখ করে ড. হাসান বলেন, অনেক সময় দেখবেন, বহেরা গাছে যখন ফুল হবে, তখন প্রচুর মাছি-পতঙ্গ আসে। তখন এদের দেখবেন বহেরা গাছে পোকা, কীটপতঙ্গ খাওয়ার জন্য ওই গাছে একত্রিত হয়ে আছে। ফুল থেকে পোকা ওড়ামাত্রই ওরা ধরে ধরে খাবে।
পাখিটির শারীরিক বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাটল-ইগ্রেটের সারা দেহ সাদা হলেও প্রজননকালে তাদের চঞ্চু, মাথা, গলা, পিঠ এবং বুক কমলা রঙে হালকা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তখন দূর থেকে শরীরের ওই স্থানগুলো অপূর্ব সুন্দর লাগে। ওরা সারা দেশে খুব ভালোভাবেই আছে।
গো-বক দিবাচর পাখি। এরা দৈর্ঘ্যে ৪৮ থেকে ৫৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই ওরা জলাভূমি বা ডাঙ্গা থেকে ঝাঁক বেঁধে উড়ে গিয়ে বাঁশঝাড় কিংবা বড় গাছের ওপর আশ্রয় নেয় বলে জানান ড. কামরুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
বিবিবি/এমজেএফ