ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জাবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাখিমেলা ২০১৩

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৩
জাবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাখিমেলা ২০১৩

জাবি: বর্ণাঢ্য আয়োজন ও পাখিপ্রেমিদের সরব উপস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাখিমেলা ২০১৩।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে পাখিমেলার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।



মেলা উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজ লেভেলে পাঠ্যবইয়ের পাখি সংরক্ষেণে তথ্য থাকা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যেন ছোট থেকেই পাখি সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে। এভাবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে পাখি ও প্রাণীর সঙ্গে পরিচয় করাতে পারলে পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ”

তিনি বলেন, “মানুষ স্বভাবতই পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী। পরিবেশ, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে সমাজ, রাষ্ট্রের সৃষ্টি। বন্যপ্রাণী, পাখি আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এ জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে পশু-পাখি ভালোবাসতে হবে। ”

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সরকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ তৈরি করেছে। এ আইনের সুফল হিসেবে দেশব্যাপী প্রকৃতিবান্ধব এক পরিবেশ গড়ে উঠবে। সরকার, গণমাধ্যম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ ভূমিকায় মানুষের মধ্যে প্রকৃতি ও পাখির প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে, সচেতনতা বেড়েছে। ”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “ক্যাম্পাসে পাখির বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। জলাশয়গুলো রক্তশাপলা ও পাখির খাদ্য জলজ উদ্ভিদে ভরে গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ ঔষধি ও শোভাবর্ধক ফুলগাছের চারা রোপন করায় ক্যাম্পাসে পাখি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের সমাবেশ উত্তরোত্তর বাড়ছে। ”

বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির প্রতি মানুষের যে মমত্ববোধ, সেই সচেতনতা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

উপাচার্য বলেন, “শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা বাংলাদেশকে পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত করতে হবে। ”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন, বন বিভাগের কর্মকর্তা তপন কুমার দে, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ইনাম আল হক, ইশতিয়াক সোবহান, ড. রোল্যান্ড হালদার, মেলার আহবায়ক অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদা বেগম বলেন, “প্রাণিবিদ্যা বিভাগ অনেক আগে থেকেই পাখি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। এরইমধ্যে বিভাগ থেকে পাখি নিয়ে ২৫টি থিসিস তৈরি হয়েছে। ”

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেলার মডারেটর অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান। এতে ড. রোল্যান্ড হালদারকে সম্মানণা প্রদান করা হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখিদেখা প্রতিযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রানার্সআপ হয়।

মেলায় অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা প্রদর্শনী, টেলিস্কোপে শিশু কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, শিশুদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।

এদিকে পাখির কিচির-মিচির ও গুঞ্জন শুনতে সারাদেশের পাখিপ্রেমিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে লেকে ভিড় করেছেন সকাল থেকেই। শিশু-কিশোররা বাইনোকুলার দিয়ে লেকের পাশে দাঁড়িয়ে পাখিদের ডানা মেলে আকাশে ওড়া, সাঁতার কাটা উপভোগ করে। এসময় কিছুক্ষণ পরপর পাখিরাও এক লেক থেকে আরেক লেকে উড়ে পাখিপ্রেমিদের আনন্দ দেয়।

এদিকে মেলা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে স্টল দিয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন। এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, আইইউসিএন, অরণ্যক ফাউন্ডেশন ও জাবির ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডব্লিউআরসি), বাটারফ্লাই হাট, বন অধিদপ্তর, বিপিএটিসি, ফেসবাংলা, নেচার স্টাডি ক্লাব ইত্যাদি। এসব স্টলে পাখি সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচার পত্র বিলি করা হচ্ছে।

২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু গত বছর ক্যাম্পাসের মূল লেকগুলোতে পাখি না আসায় পাখি মেলার আয়োজন করা হয় নি।

এবারের পাখি মেলায় সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, আইইউসিএন, অরণ্যক ফাউন্ডেশন ও জাবির ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার(ডব্লিউআরসি)।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।