ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাখি হত্যায় বিলাসিতা!

রহমত উল্লাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৩
পাখি হত্যায় বিলাসিতা!

ঢাকা: কারো কারো বিলাসিতায় পৃথিবীটা আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রকৃতি।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখি একটি অন্যতম প্রাণী।

বৈচিত্রময় এ প্রাণীকে অতি উৎসাহী খামখেয়ালি মানুষগুলো বিলাসিতার বসে অবাধে হত্যা করেই চলেছে।

ভারতে একটি হরিণ হত্যা করায় সালমান খানকে যখন শাস্তি দেয়া হচ্ছে তখন আমাদের দেশে অবাধে প্রাণী হত্যা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, আইনের দুর্বলতা, সচেতনতা না থাকা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পাখি হত্যা হচ্ছে অহরহ।

কেউ না জেনে, কেউ বিলাসিতায়, কেউ অজান্তে, মানুষের আত্মঘাতী কমকাণ্ডে প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রাণীটি হারিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘টাংগুয়ার বিলে পাখি সংরক্ষণ ও তাদের জীবনের ঝুঁকি’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকটির আয়োজন করে বাংলাদেশ বাড ক্লাব।

দিন দিন প্রকৃতি থেকে পাখি বিলুপ্তির আটটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে গোলটেবিল বৈঠকে।

প্রথমত, মৃত প্রাণী প্রকৃতিতে নানা প্রকার দূরারোগ্য রোগ সৃষ্টি করে থাকে। প্রকৃতিতে মৃতদেহ সরানোর কাজে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে আকাশের প্রহরী খ্যাত শকুন।

গরু-ছাগলের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ডাইক্লোফেন, ডিক্লোভেট ইঞ্জেজেকশন ব্যবহৃত হয়। এসব প্রাণীর দেহে অন্য রোগ থাকলেও এ ইঞ্জেজেকশন দিলে প্রাণী মারা যায়। এসব প্রাণী বক্ষন করে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে সব শকুন মারা যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, হাওর, বাওর ও জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে সেচ দেয়ার ফলে জলউদ্ভিদ, ছোট মাছ ও প্রাণী মারা পড়ে। এসব কুরা ঈগল নামে একটি প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে। ধীরে ধীরে এ প্রাণী আজ বিলুপ্ত।

তৃতীয়ত, সোনাদিয়া দ্বীপে চামচ ঠুঁটো বাটান, নডম্যান সবুজপা, বড় নট, কালালেজ জৌরালি ও ইউরেশীয় গুলিন্দা নামে পাঁচ প্রজাতির বিপন্ন, সংকটাপন্ন ও বিপদগ্রস্ত পাখি বাস করে। এ পাখিগুলোর দ্বিতীয় কোনো আবাসস্থল নেই। কিছু অসৎ মানুষ ও শিকারি এ পাখিগুলো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে। এ পাখি রক্ষায় সরকার সোনাদিয়া দ্বীপকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষনা করার পরও হত্যা বন্ধ নেই।

চতুর্থত, বুনো হাঁস প্রকৃতির এক লীলাভূমি। এটি অতিথি পাখি হিসেবে বেশ পরিচিত। শীতকালে সিলেট বিভাগসহ হাওর, বাওর অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ বুনো হাঁস আমাদের দেশে আসে। এ অঞ্চলে শিকারী, বিলাসী মানুষ বিষ দিয়ে, জাল পেলে হাজার হাজার বুনো হাঁস ধরে ভোজন করে। ফলে বুনো হাঁস আমাদের দেশে নেই বললেই চলে।

পঞ্চমত, শীতকালে হাওর, বাওর, বিল ও নদীতে নৌবিহারে নেমে অনেকেই অতিথি পাখি শিকার করেন। ধনী ও মাতবরদের জন্য এ শিকার বিলাসিতার প্রতীক। পাখি শিকার বেআইনি এটা জানার পরও সবাই অবাধে তা শিকার করে আসছে। এতে প্রতি বছর লাখ লাখ পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ষষ্ঠত, সুন্দরবনের উত্তর-পূবাঞ্চলে পানিতে বিষ দিয়ে মাছ ধরার এক নতুন কৌশল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষক্রিয়া মৃত মাছ ভেসে উঠলেই সহজেই ধরে বাজারে বিক্রি করা যায়। এ বিষাক্ত মাছ খেয়ে মানুষের ক্ষতি না হলেও প্রকৃতি কন্যা ‘মদনটাক, প্যারাপাখি ও খয়রামাছরাঙা’র মতো দুর্বল পাখিগুলো আজ বিলুপ্তি হয়ে গেছে।

সপ্তমত, আহারে বৈচিত্র্য আনার জন্য অনেকেই বাজার, রাস্তাঘাট থেকে কণ্ঠী ঘুঘু, নিশি বক, কাদাখোঁচা ও ছোট বুনো পাখি কেনেন।

অনেক টাকা ব্যয় করে তারা বুনো গন্ধযুক্ত, যৎসামান্য মাংস ও অজানা রোগ-জীবাণুবাহী প্রাণী ঘরে আনেন। যতো পাখি রান্না হয়, তার চেয়ে বেশি পাখি বিক্রেতার ঝুঁড়িতে মারা যায়। এ রসন বিলাসীদের কারণে দেশে লক্ষ লক্ষ পাখি ধ্বংস হচ্ছে।

অস্টমত, পাখি ভালোবাসে বলে গ্রামীণ শিশু-কিশোর গ্রীষ্মে পাখির বাসা (শালিক, টুনটুনি) থেকে ছানা ছিনিয়ে নিয়ে পালতে চেষ্টা করে। ছানাগুলো সবই অপুষ্টি, রোগ ও দুর্ঘটনায় মারা যায়।

প্রতি গ্রামে ২০টি করে ছানা মারা গেলে বছরে লাখ লাখ ছানা মারা পড়ে। এতে সুকণ্ঠ কোকিল থেকে শুরু করে বেশ পরিচিত পাখিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পাখি নিধন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন গোলটেবিলের বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। পাখিকুলের প্রতি একটু ভালোবাসা, আইন মানলে প্রকৃতি থেকে এগুলো হারিয়ে যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৩
আরইউ/সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।