ঢাকা, বুধবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাওয়ায় দোলে ঝুমকো লতা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৩
হাওয়ায় দোলে ঝুমকো লতা

ঝুমকো লতা। ফুলটির নাম হয়তো সবারই জানা।

নাম শুনলেই ছোটবেলায় পড়ে আসা সেই `ঝুমকো লতা’ কবিতাটির কথা মনে পড়ে যায়।

আমাদের দেশে ঝুমকো লতা বলে পরিচিত ফুলটিকে ইংরেজিতে বলা হয় Stinking Passionflower কিংবা Love-in-a-mist.  wild maracuja, Bush Passion fruit, marya-marya, wild water lemon, running pop নামেও পরিচিত এটি।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora foetida। পরিবার Passifloraceae।   P. foetida প্রজাতির ফুল ঝুমকো লতা।

Foetida শব্দ দিয়ে ল্যাটিন ভাষায় দুর্গন্ধ বোঝানো হয়। শুকনো পাতার তীব্র গন্ধের কারণে ঝুমকো লতার বৈজ্ঞানিক নামের শেষে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

ঝুমকো লতা বা প্যাশন ফ্লাওয়ার নামক ফুলটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম (দক্ষিণ টেক্সাস ও অ্যারিজোনা) এলাকা, মেক্সিকো, ক্যারাবিয়ান, সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসী।

দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া এবং হাওয়াইয়ের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে ঝুমকো লতা।

নাম শুনেই বোঝা যায় লতানো গাছ ঝুমকো লতার। গাছটির ডালপালা সরু হয়। বয়স্ক ডালগুলো হয় কাঠের মতো। পাতা ছিঁড়লে গন্ধ পাওয়া যায়।

ঝুমকো লতা ফুলটির রং সাদা বা ক্রিম অথবা উভয় রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে। বেগুন রঙেরও হয় ফুলটি। ফুলের ব্যসার্ধ ৫-৬ সেন্টিমিটার।

ঝুমকো লতার ফলও হয়। ফলের আকৃতি গোলাকার। ব্যসার্ধ ২-৩ সেন্টিমিটার। পাকার সময় ফলটি হলদে কমলা থেকে লাল রং ধারণ করে। বহুবিচিযুক্ত ফল ঝুমকো লতার।

ফলই শুধু নয়, ঝুমকো লতার কচি পাতাও খাওয়া যায়। মঞ্জরিপত্রের সাহায্যে ঝুমকো লতা পোকামাকড়দের ফাঁদে ফেলতে পারে। ফুলটির মঞ্জরিপত্র থেকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়।

এই ফুল দেখতে কানের ঝুমকার মতো বলেই হয়ত এমন নাম। আমাদের দেশে এখন অনেক বাগানে ফুলটি চোখে পড়ে। দেখতেও ভারি সুন্দর। গাছ চিরসবুজ, পাতায়ভরা ও লতানো। পাতার গোড়া থেকে গজানো একক আকষী দিয়ে অনেক দূর উঠতে পারে। কিন্তু উঁচু কোনো গাছে এই লতাটি উঠানো হয় না। বাগানে বেড়ার উপর বা বাঁকানো রেলিংয়ের উপর লাগানো হয়।

পাতা দেখেও খুব সহজে গাছ চেনা যায়। কারণ পাতার কিনারা গভীরভাবে বিভক্ত। এই অংশগুলোকে লতি বলা হয়। প্রতি  পাতায় ৩ থেকে ৫টি লতি থাকে, সব মিলিয়ে ৮-১২ সেমি লম্বা। ফুল ফোটে গ্রীষ্মের শেষভাগে, থাকে গোটা বর্ষা। এ জন্য বর্ষার ফুল হিসেবেই পরিচিত। পাতার কোল থেকে একটি একটি করে সুগন্ধি ফুল ফোটে। পাপড়ি সংখ্যা ৫।

শুকনো জায়গায় টিকে থাকতে পারলেও ভেজা জায়গা মূলত ঝুমকো লতার জন্য উপযোগী।

ভিয়েতনামের বিভিন্ন স্থানে ঝুমকো লতার শুকনো পাতা ঘুমের সমস্যা সারানোর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ঝুমকো লতায় প্রচুর পরিমাণে স্যাপনিনস রয়েছে। সে কারণে সাবানের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয় ডিটারজেন্ট তৈরিতে।

মিষ্টি একটি ফুল ঝুমকো লতা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও তার দেখা মেলে। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন কবিরাও। কলমের সাহায্যে সাহিত্যেও তুলে ধরেছেন তার রূপের কথা। ফররুখ আহমদের ‘ঝুমকো লতা’ নামক ছড়ায় এভাবেই ঝুমকো লতার সৌন্দর্য ধরা পড়েছে:  

ঝুমকো লতা কানের দুল
উঠল ফুটে বনের ফুল-
সবুজ পাতার ঘোমটা খুলে
ঝুমকো লতা হাওয়ায় দোলে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৩
এএ/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।