সকালটা এ বিলে কাটিয়ে আশপাশের বিলগুলোতে খাবার সময় তাদের। বিকেল হলে আবার ফিরবে বাইক্কায়।
পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে তাই এবার হিজল-কড়স বনের নিচ ধরে হাঁটার পরিকল্পনা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএস-এইডের আর্থিক সহযোগিতায় ক্রেল বাইক্কার বিলে কাজ করে। বনায়নের পাশপাশি তারা এসব গাছ ও গাছের নিচে বেশকিছু বালিহাঁসসহ দেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বাসা তৈরিতে বাক্স এবং কলস বসিয়েছে। আরও কিছুদিন পর থেকে এসব বাক্সে বাসা বাঁধতে শুরু করবে বালিহাঁস, শালিক, দোয়েল প্রভৃতি পাখি।
গাছগুলোতে যে নিয়মিত পাখি বসে তা নিচ দিয়ে হাঁটার সময় ভালোই টের পাওয়া গেলো। সাদা চুনের মতো বিষ্ঠায় ঢাকা অধিকাংশ গাছের পাতা। নিচের অবস্থাও তাই। বিকেলে এসব গাছে হাজার হাজার পাখি এসে বসে। কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত থাকে সেসময়।
এবার বিকেলে সময় কাটানোর পরিকল্পনা নেই। তাই দুপুরে হেঁটে দেখা। হাঁটতে হাঁটতে সঙ্গী সহধর্মিণী নিশি ‘এইটা কী’ বলে আঁতকে উঠলো! তাকিয়ে দেখি কালচে সবুজ ডাল-পাতার ফাঁকে গোল গোল বড় চোখ মেলে তাকিয়ে আছে একটি প্যাঁচা। তার গায়ের রংও বাদামি ধরনের, বুকে কিছু সাদা ফুট আছে। পাতার আড় থেকে তাকে খুঁজে বের করাই কঠিন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে আশস্ত করলাম তাকে।
ক্যামেরার বড় লেন্স তাক করতেই চোখ যেন আরও মোটা হয়ে গেলো। একটু নড়ে চড়ে বোধহয় ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু তার জায়গা ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না। আকারে বেশি বড় না হলেও দম আছে তার- এটা বোঝা গেলো।
বিভিন্ন প্রজাতির প্যাঁচা দেখলেও এ প্রজাতিটি আগে দেখা হয়নি। স্বল্প সময়ে এর আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো একটু অন্য স্বভাবের হতে পারে। গায়ের রং গাঢ় বাদামি। গোলাপি আভার চোখের মণির চারপাশজুড়ে লাল রঙের বৃত্ত। বুকে সাদাটের রঙের উপর লালচে বাদামি ফোঁটা সৌন্দর্য বাড়িয়েছে পাখিটির।
কথা হলো বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষক তানিয়া খানের সঙ্গে।
ছবি দেখে তিনি জানালেন, এটি খয়রা শিকরে প্যাঁচা। মূলত নিশাচর ও শিকারি পাখি। এদের একা অথবা জোড়ায় দেখা যায় বন, বাগান অথবা অনেক গাছপালা আছে এমন জায়গায়। শরীরের গড়ন বাজপাখির মতো। ছোঁ মারায় ওস্তাদ। খাবার হিসেবে এদের পছন্দ পোকামাকড়, ব্যাঙ, গিরগিটি, ছোট পাখি, ইঁদুর, সাপের বাচ্চা ও ছোট বাদুড়।
এদের ইংরেজি নাম Brown Hawk Owl. বৈজ্ঞানিক নাম Ninox Scutulata. এরা আকারে ৩৫ সেন্টিমিটারে মতো হয়। দিনে মূলত এরা ঝিমায়-ঘুমায়। থাকতে পছন্দ করে অন্ধকার জায়গায়। প্রখর দৃষ্টিশক্তিতে এরা উড়ন্ত শিকারকেও ধরে ফেলতে পারে। এটা তাদের বিশেষ দক্ষতা।
মার্চ থেকে জুন এদের প্রজনন মৌসুম। তিন চারটে গোলাকার ধরনের ডিম পাড়ে খড়ি মাটির মতো সাদাটে রঙের। বাসা করে গাছের খোঁড়লে।
গাছ বেশি আছে এমন সব অঞ্চলে বাংলাদেশের আবাসিক এ পাখিটির দেখা মেলে।
আরও পড়ুন
** দেশি পাখি দেখতে হাল্লার হাকালুকি
** বাইক্কা বিলের অ্যাক্রোবেট বেগুনি কালেম
** ‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ
** যতো শীত ততো পাখি বাইক্কা বিলে
** বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
এএ/এমজেএফ