ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সঙ্গীর সঙ্গে পরিণয় ঘটতে চলেছে ‘গড়াই’র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
সঙ্গীর সঙ্গে পরিণয় ঘটতে চলেছে ‘গড়াই’র ঢাকা থেকে নেওয়া পুরুষ ঘড়িয়াল- ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: সঙ্গী পাওয়ার পরও কিছুদিন দূরে দূরেই ছিল গড়াই। কিন্তু চেনাজানার পর শেষ পর্যন্ত কাছাকাছি এসেছে। পুকুরের পানিতে পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর গড়াইয়ের কারণে তার সঙ্গীরও ৩৪ বছরের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব ঘুচেছে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরেই দু’জনের মিলন ঘটবে। এর মধ্যে দিয়েই শুভ পরিণয় ঘটতে চলেছে উভয়ের সম্পর্কের। এর পরই আসবে নতুন অতিথি।

বলছিলাম ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে আসা পুরুষ ঘড়িয়াল ‘গড়াই’র সংসার গড়ার কথা। চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল ছিল ঢাকা চিড়িয়াখানায়।

আর রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ছিল দুটি নারী ঘড়িয়াল। অর্থাৎ দুই চিড়িয়াখানার কোনটিতেই নারী-পুরুষের জোড়া ছিলো না। তাই বংশ বিস্তারও হচ্ছিলোনা।

বিষয়টি চিন্তায় আসার পর আবারো ঘড়িয়ালকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

পরে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) উদ্যোগে দেশের চিড়িয়াখানাগুলোতে থাকা বিলুপ্তপ্রায় ঘড়িয়ালের জোড়া মিলিয়ে প্রজননের কাজ শুরু করা হয়। ঢাকার মহাখালীতে আইইউসিএন এর উদ্যোগে রাজশাহীসহ দেশের সবগুলো চিড়িয়াখানার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়।  

সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এসব ঘড়িয়ালগুলোর জোড়া মেলানোর মাধ্যমে প্রকৃতিতে ঘড়িয়াল ফিরিয়ে আনার। জোড়া মেলার পর এসব ঘড়িয়াল যেসব বাচ্চা উৎপাদন করবে তা পদ্মানদীতে ছাড়া হবে। তৈরি করা হবে ঘড়িয়ালের অভয়ারণ্য। এরপর ঢাকা থেকে নিয়ে এসে গত ১৩ আগস্ট দুপুরে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় অবমুক্ত করা হয় এই পুরুষ ঘড়িয়াল। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আগে থেকেই ছিল একটি নারী ঘড়িয়াল। ফলে সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে পুরুষটি ছাড়া হয়।  

পরে পুরুষ ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। আর নারীটিকে নাম না দিয়ে বলা হয় ‘গড়াইয়ের পরিবার’।  

রাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার মনিটরিং অফিসার শেখ আবু জাফর টুটু বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে গড়াইয়ের বয়স ৩৮ ও তার নারী সঙ্গীর বয়স ৩৪। রাজশাহীতে এনে পানিতে ছাড়ার পর প্রথমে ঘড়িয়াল দুটি একটু দুরত্ব বজায় রাখে। পরে ধীরে ধীরে তাদের কাছাকাছি হয়ে এক সঙ্গে ভাসতে দেখা যায়। সহজেই মিশতে পারবেনা মনে করা হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে মারামারি হয়নি। এরপরও তাদের নজরদারিতে রেখে গতিবিধি এবং আচরণ বোঝার চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার নারী ঘড়িয়ালরাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ড. ফরহাদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখানে দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল। যাদের বয়স ৩৪ থেকে ৩৫ বছর। পদ্মা নদীতে মাছ মারতে গিয়ে জেলেদের জালে আটকা পড়েছিলো ঘড়িয়ালগুলো। জেলেরা সেগুলো ধরে চিড়িয়াখানায় দেয়। আর ঢাকা চিড়িয়াখানায় চারটি ঘড়িয়াল ছিল। যার সবগুলোই পুরুষ। সে কারণে প্রজনন করানো সম্ভব হচ্ছিলো না।  

এজন্যই ঢাকা থেকে রাজশাহীতে একটি পুরুষ ও রাজশাহী থেকে ঢাকায় একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল বিনিময় করা হয়। রাজশাহীর ঘড়িয়ালটি ঢাকা চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয় গত ১১ আগস্ট। ঢাকারটি ১২ আগস্ট রাজশাহী আনা হয় এবং ১৩ আগস্ট ছাড়া হয়। এরপর থেকে এক সঙ্গেই থাকছে ঘড়িয়াল দুটি। এখন পর্যন্ত বেশ ভালো বোঝাপড়া রয়েছে তাদের মধ্যে।  

জানতে চাইলে ড. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি হচ্ছে ঘড়িয়ালের প্রজনন মৌসুম। মে-জুন মাস হচ্ছে ডিম পাড়ার সময়। একবারে প্রজননে ৩৫ থেকে ৪০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম পড়ার পরে তারা বালুর মধ্যে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রাখে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। চিড়িয়াখানার যেই পুকুরে ঘড়িয়াল থাকে সেখানে ডিম পেড়ে রাখার গর্ত করার তেমন ব্যবস্থা নেই। তবে আপাতত পুকুরপাড়ে সামান্য বালি ফেলা হয়েছে। সামনের মাসে পদ্মার চর থেকে আরও বালি এনে পুকুরের একাংশে ফেলা হবে। সেখানে ঘড়িয়াল ডিম পাড়তে পারবে। ফলে নতুন বছরে গড়াই দম্পতির সংসারেও নতুন অতিথি আসবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত এই প্রধান কর্মকর্তা।  

ড. ফারহাদ উদ্দিন বলেন,  ঘড়িয়াল বাংলাদেশে একটি বিপন্ন প্রাণী। দিনে দিনে এদের সংখ্যা কমছে। বর্তমান সময়ে দেশে ঘড়িয়াল দেখা ভার। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর ১৫-১৭ বছর বয়সে প্রজনন সক্ষম হয়। এরা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর বাঁচে। ঘড়িয়ালকে ইংরেজিতে বলা গাভিয়াল। ঘড়িয়াল অর্থ নাক বা তুণ্ড-এর ডগায় ঘড়ার মত আকৃতি, যা পুরুষ ঘড়িয়ালের বেশ বড় হয়। পানির ওপর এটুকু বেরিয়ে থাকে। মাছই এদের প্রধান খাদ্য।  

আঁশবিহীন মাছ, বিশেষ করে বোয়াল, আইড়, গুঁজি, পাঙ্গাস বেশি পছন্দ করে এরা। লম্বা চোয়াল মাছ ধরার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। মাছ প্রধান খাবার বলে এরা মেছো কুমির নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এসএস/বিএস 
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।