তারপরও হাওর প্রকৃতির সতেজতায় ভরে উঠছে হৃদয়, উবে যাচ্ছে সমস্ত শঙ্কা। প্রাকৃতিক শুদ্ধতা হয়ে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে শাপলা-পদ্মের হাসি।
মিনিট বিশেক পর ফুটো দিয়ে প্রবেশ করা পানিতে ডিঙ্গি-নৌকাটি ডুবে যাওয়ার নানান ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক সময় গন্তব্যে পৌঁছলো। প্রতিযোগিতাময় দৌঁড়ের সঙ্গে এগুচ্ছে সবাই। কে কার আগে ডিঙ্গি-নৌকাকে পেছনে ফেলে ডাঙ্গা স্পর্শ করবে!
চারদিকে বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। হেমন্তের স্নিগ্ধ রৌদ্র তখন মেঘের কোলে বিশ্রাম নিচ্ছে। বিনিময়ে সে বিলের পাড়ে বিছিয়ে দিয়ে মেঘলা আকাশ আর সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসের মৃদুচঞ্চলতা। যার আহ্বানে নড়ে ওঠে শাপলা-পদ্মের দল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওর সংলগ্ন লামুয়া এলাকা। বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে এই মেঘলাবরণের আভা সমস্ত হাওয়জুড়ে বৃষ্টিময় পূর্বাভাসকে যেন প্রতিধ্বনিত করছে। বিলের মাঝখানের এই জায়গাটি বসতিঘেরা। বসতবাড়ি পাকা স্থাপনা দাঁড়িয়ে রয়েছে এখানে। কিছু জেলে পাকা ঘরটির ভেতর নিজের আলাপ জমিয়ে বিশ্রামরত।
বাড়িটির পেছনে গিয়েই চোখে পড়লো সাপের মতো কী যেন একটা ঝুলে রয়েছে! ততক্ষণে জেলেদের বাক্যসতর্কতার বান বিদ্ধ করলো - ‘পিছনে যাইয়ো না বা। ’... ‘পিছনে যাও কিতারলাগি?’
নিষেধ ডিঙ্গিনোর তাগিদ অদম্য হয়ে উঠলো সাপের মতো ওই বস্তুতার কৌতুহলে। এটা কী? -প্রশ্ন করতেই অবাক করা উত্তর এলো – ‘শুঁটকি’। সবিস্ময়ে পুনরায় ‘শুঁটকি’ উচ্চারণ করতেই মৃদু হাসি জেলেদের মুখে। হাইল হাওরের মৎস্যজীবীদের এমন অবাক করা প্রাকৃতিক শুঁটকি চাষ।
ওই জেলেদের বয়োঃবৃদ্ধ আলফু মিয়া কিছু উত্তর নিয়ে এগিয়ে এলেন। জানালেন, আমরা এভাবেই শুঁটকি তৈরি করে খাই। রোদে শুকিয়ে তিন-চারদিন পর কৌটায় রেখে দেই।
কি কি মাছ এখানে ঝুঁলে রয়েছে? এ উত্তরে তিনি বলেন, ‘শোল এবং রুই মাছ ঝুলানো রয়েছে এখানে। এগুলো বিষমুক্ত। বাজারের শুঁটকিতে তো নানা রকমের উপাদান মিশ্রিত থাকে। এগুলো আমরা নিজেরা খাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করি। তাতে মাছি ও পোকার আক্রমণ থাকে না। ’
‘এখান থেকে বাজার বহু দূরে। আর আমাদের মতো গরীব মানুষদের কি সাধ্য আছে বাবু বাজারের শুঁটকি কিনে খাবার? তাই নিজেরা সাধ্যমত নিজেদের শুঁটকি তৈরি করে খাই’ -এক প্রশ্নের উত্তরে এমনটিই জানান হাওরপাড়ের বাসিন্দা আলফু মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
বিবিবি/বিএস