ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

স্থবির কুয়াশা মোড়া শীত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
স্থবির কুয়াশা মোড়া শীত কুয়াশা মোড়া ভোর। ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ থেকে: টের পাওয়া যাচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছেদ্য-নিগূঢ় সম্পর্ক। কারণ কুয়াশার চাদর সব কিছু ঢেকে রেখেছে। মানুষের সরব কর্মজীবনও ছন্দ হারিয়েছে যেন। সকাল তখন প্রায় সাড়ে আটটা। তবু মনে হচ্ছে চারদিকে অতল অন্ধকার। অনেকেই তখনও ঘুমে কিংবা ঘরের উষ্ণ আশ্রয়ে।

'এবার শীত এসেছে পুরো ও নিশ্ছিদ্র কুয়াশার আস্তরণ নিয়ে। ভারী কুয়াশায় ছেয়ে আছে চরাচর।

' বললেন বিষ্ণুপদ দাস। অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে তিনি। স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য প্রাতঃকালে বের হয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, 'এই কুয়াশা মোড়া শীতে সঙ্গীরা কেউ আসে নি। ঝাপসা মাঠের প্রায়োন্ধকার ভূতুড়ে পরিবেশে একা একা শরীরচর্চা করা যায় না। কালীবাড়িতে পূজো দিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছি। '

আসলেই বড় বিচিত্র কুয়াশার খেলা চলছে চারপাশে। হালকা বাতাসে ধোঁয়ার মতো স্থবির কুয়াশা ঘিরে ফেলছে সব কিছু। শহরকে মনে হচ্ছে অচেনা। সব কিছু থাকছে অজানা, অদেখা। কারণ পাঁচ হাত দূরের কিছুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। পুরো পরিস্থিতি হয়ে আছে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ওরহান পামুকের 'স্নো' উপন্যাসের মতো ঝাপসা।

কুয়াশা মোড়া ভোর।  ছবি: সংগৃহীত ভোরের দিকে শহরের চিরচেনা রূপটিও আর দেখা গেলো না। ফজরের নামাজ শেষে মর্নিং ওয়াকের মানুষগুলোকেও পাওয়া যায় নি। থমথমে অন্ধকারে কোথাও যেন কেউ নেই।

শহরের প্রান্তঘেঁষা মোড়গুলোতে অন্যদিন কিছু লোক থাকে তাজা শাক-সবজি আর সদ্য-ধরা মাছ নিয়ে। একটা ছোটখাট বাজারের মতো জমে। সেগুলো শূন্য। এক-দুইজন পথচারী এদিক সেদিক হেঁটে চলে গেলেন জবুথুবু পায়ে।

কাগজে-কলমে ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রকৃতির রূপ বিচিত্রতার উদ্ভাসনে মানব-মনেও কমবেশি দোলা লাগে। প্রকৃতি ও পরিবেশের মতো মানুষও উদ্বেলিত-সন্দীপিত হয়ে ওঠে বহুবর্ণিল ঋতুতে ঋতুতে। ছয়টি ঋতু সময়ের পরিবর্তনে ধারণ করে অনুপম সৌন্দর্যের অন্তহীন রূপ মহিমা। বিচিত্র রং, ফুল-ফল সমৃদ্ধ আবহমান বাংলার চিরচেনা প্রকৃতি কত অপরূপ বদলের মাঝ দিয়ে চলে! প্রকৃতির সংশ্লিষ্টতায় আবর্তিত হয় মানুষের জীবন-মন, চিন্তা-চেতনা, বোধ ও বোধির অন্তর্জগৎ সমেত যাপিত জীবনের যাবতীয় অনুসঙ্গ। গ্রীষ্ম বা বসন্তে যা ছিল উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল, শীতে তা-ই বিষণ্ন ও নিথর।

প্রকৃতির মঞ্চে স্থবির কুয়াশা মোড়া বৈরাগ্যের সুরলহরী নিয়ে উত্তরীয় হিমশীতল মৃদু-মন্দ সমীরণে শীত এসে গেছে। শহর পেরিয়ে খানিক দূরে গাঁয়ের কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেলো কুয়াশার পাখনায় নিশির শিশির নিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে মানুষ ও প্রকৃতি। পাওয়া যায় নি ভোরের কোলাহল। মানুষের চলাচলও সীমিত। দিগন্ত বিস্তৃত রিক্ততা ও শূন্যতায় বর্ণবৈভবহীন প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ধূসরতায় পরিণত হয়েছে শীতের তীব্র কুয়াশায়।

ধানের শীষে শীতের শিশির।  ছবি: বাংলানিউজকানন বীথির কুসুম কলি ও বৃক্ষপল্লব হলুদ রং ধারণ করে শাখাচ্যুত হচ্ছে। শীতের নির্মমতার পরশে জীর্ণ বিবর্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

এটা ঠিক যে, সব ঋতুর প্রভাব মানব-মনে সমভাবে প্রত্যক্ষীভূত নয়, বিশেষ বিশেষ ঋতুর প্রভাব ও উপস্থিতি মানব-মনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে, তাদের মধ্যে শীতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর বাংলাদেশের শীত যদি ক্রমে ক্রমে তুষারাবৃত ইউরোপের মতো কুয়াশাময় হয়, তাহলে জীবনের গতি ও ছন্দ বদলে যেতে বাধ্য। প্রকৃতি যে ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, এই শীতের শুরুতেই তা বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এমপি/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।