ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

২ কোটি টাকার সরকারি গাছ হরিলুট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
২ কোটি টাকার সরকারি গাছ হরিলুট কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনীঃ ফেনীর সোনাগাজীতে সড়কের পাশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ কোটি টাকার সরকারি গাছ হরিলুট হয়ে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আর বন বিভাগের উদাসীনতা এবং কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কারণে এই হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপকারভোগীরাও।

বন বিভাগ, এলাকাবাসী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-সোনাপুর থেকে সোনাগাজী হয়ে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটির উন্নয়ন কাজ ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে শুরু হয়। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে পরিপূর্ণ কাজ সম্পাদনের কথা রয়েছে।

ফেনী অংশের সাহেবের ঘাট থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দু'পাশে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার গাছ ছিল।

সড়কটির দু’পাশ বর্ধিতকরণের কারণে গাছগুলো কাটতে হবে। এই মর্মে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিধি অনুযায়ী দরপত্র আহবানের  চিঠি দেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকেও চিঠি দেন।

বন বিভাগের দাবি, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে সড়কের দু'পাশে গাছগুলো লাগিয়েছেন অধুনালুপ্ত এনজিও সেবা ও আশা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাছগুলো হরিলুট হয়ে গেছে।

বন বিভাগের উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক জানান, গাছগুলো লাগিয়েছেন অধুনালুপ্ত এনজিও। দরপত্র আহবান করার কথা ছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগের, কিন্তু বন বিভাগের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় লিখিতভাবে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী মো. কামাল উদ্দিন দাবি করেন, অধুনালুপ্ত এনজিওর লাগানো গাছের একটি অংশের মালিক সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, এনজিও কর্তৃপক্ষ (যদি থাকে), উপকারভোগী জনগণ।

নিলামে না দেয়ার ব্যাপারে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে বলেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেনীর নির্বাহী প্রকোশলী মাসুদুল করিম জানান, গাছগুলোর মালিক ছিল এনজিও, তাই আমরা নিলাম দিতে পারি নাই।

এ দিকে সড়কের দু'পাশের গাছগুলো এলাকার প্রভাবশালী মহল, স'মিল মালিক জয়নাল আবেদীন কোম্পানি, কিছু বখাটে চোর হরিলুট করে নিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কমদামি, অনেকটা আকার্যকর, বাঁকা ও অপ্রয়োজনীয় গাছগুলো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্কেভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলে রেখেছে। সেগুলোর ডাল-পালাও প্রভাবশালীরা হরিলুট করে নিয়ে গেছে।

এসব সরকারি গাছ হরিলুটের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসীনতাকেই দায়ী করে বলেন, আমি গাছগুলো নিলাম দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত চিঠি দিয়েছি, কিন্ত তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী মো. কামাল উদ্দিন তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে অনেকগুলো গাছ সোনাগাজীর স'মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
এসএইচডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।