বিকেলের নিভে আসা আলোয় হঠাৎ কোনো পাখির ডাক কিংবা গাছনির্ভর কোনো বুনোপ্রাণীর তৎক্ষণাৎ চিৎকার প্রাকৃতিক সুস্থতার প্রতীক। যা শোনা মাত্রই উদাস হয় মন!
সকালের শিশুরোদের আলো অরণ্যপ্রান্তরের কিছু কিছু লতাপাতাকে স্পর্শ করে খাদ্যসম্ভারের যোগান দিয়ে চলেছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান কিংবা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান আমাদের দেশের বিপন্ন ও দুর্লভ বন্যপ্রাণীদের নির্ভরতার স্থান হিসেবে প্রজনন বৃদ্ধিতে আপনা থেকে প্রাকৃতিকভাবে সহায়তা দান করে চলেছে।
সবুজ বনভূমির সুদীর্ঘকালের বাসিন্দা গন্ধগোকুল। জন্মসূত্রে এসব বনগুলোই তার পৈত্রিক নিবাস। এরাই এসব চির সবুজ বনের টিকে থাকার সবুজ সংকেত। তবে গাছের কোল বেয়ে ধীর পায়ে আরোহন করা এই প্রাণীটি আজ সংকটাপন্ন। অবৈজ্ঞানিক কবিরাজি চিকিৎসার অবাধ শিকার হওয়া এই প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ নির্মূলের পথে।
বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলায় এই প্রাণীটিকে গন্ধগোকুল ছাড়াও তাল খাটাস বা ভাম অথবা নঙ্গর বলা হয়ে থাকে। এর ইংরেজি নাম Asian Palm Civet / Common Palm Civet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Paradoxurus hermaphrodites। এদের শারীরিক বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দৈর্ঘ্য ৪৮ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার। এরা ২ থেকে ৬ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এদের দেহ বাদামি ধূসর বা ধূসর কালো রোমে আবৃত। এরা বৃক্ষবাসী ও নিশাচর। প্রজনন মৌসুম ছাড়া মূলত একাকী থাকে।
প্রাণীটি সর্বভূক; তবে ফল, তাল-খেজুরের রস, হাঁস-মুরগি-কবুতর ও বিভিন্ন পাখি বেশি প্রিয়। বছরের দুইবার প্রজনন করে, দুই থেকে ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে বলে জানান তিনি।
বিলুপ্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, এক সময় বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে এদের দেখা যেত। বর্তমানে অরণ্য ধ্বংস, বাসস্থান বিলুপ্তি এবং তথাকথিত কবিরাজি ওষুধের জন্য অবাধ শিকারের ফলে এই সুন্দর প্রাণীটি দিনদিন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আইইউসিএন এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে এরা সংকটাপন্ন (Vulnerable)।
চলতি মাসের ২ তারিখে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে গন্ধগোকূলের এই দুটি ছবি তুলেছেন বলে জানান বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭
বিবিবি/আরআই