এবার শীত মৌসুমেও সেখানে দেখা মেলেনি অতিথি পাখির। বিভিন্ন উদ্যোগ আর চেষ্টার পরও দুর্গাসাগরে পাখি না আশায় পর্যটকরা বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বরিশাল নগর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মাধবপাশায় দুর্গাসাগরের অবস্থান। মাধবপাশা ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সর্বশেষ ও তৃতীয় রাজধানী।
১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গা রানীর প্রতি অগাধ ভালোবাসার গভীরতা ও এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনের জন্য দীঘিটি খনন করেন।
যার নামও রাখা হয় স্ত্রীর নামে দুর্গাসাগর। কিন্তু দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরপুর দীঘিটি শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে যেতো। তাই প্রথম খননের ১৯৪ বছর পর ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে দীঘি খননসহ মাঝখানে পাখিদের সুবিধার্থে দ্বীপ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রায় ৪৬ একরের এই দীঘিকে 'দুর্গাসাগর দীঘি উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য' প্রকল্পের আওতায় নিয়ে পরিণত করা হয়েছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে। দীঘিটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। স্থানীয়রা জানায়, যখন এই দীঘিতে অতিথি পাখিরা আসতো, তখন সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁক বেঁধে খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়তো। আর ফিরে আসতো রাত পোহাবার আগে। খাদ্যের সন্ধানে যাওয়ার সময় পাখিদের কলকালিতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে যেতো পুরো এলাকায়।
স্থানীয় ব্যবসায় আব্দুল জব্বার জানান, ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর সিডরে পাখিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সিডর পরবর্তী ত্রাণের মালবাহী হেলিকপ্টার বাবুগঞ্জের রহমতপুরের বিমানবন্দরে আসা শুরু করলে কমতে থাকে পাখির সংখ্যা। বিশেষ করে কার্গো কপ্টারের বিকট শব্দ পাখিদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।
অপরদিকে সিডরে বিধ্বস্ত মঠবাড়িয়া, শরণখোলা যাওয়ার রুট ছিল দীঘির উপর দিয়েই। স্থানীয়দের ধারণা মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ভয় পেয়ে পাখিরা চলে যেতে থাকে। মাসব্যাপী ত্রাণ বহনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরও সেই থেকে ১০ বছর পার হয়ে গেলেও অতিথি পাখি শূন্যই দুর্গাসাগর।
তবে এবারে শীতের প্রথম দিকে কিছু অতিথিপাখি দীঘিতে ক্ষণিকের জন্য দেখা গিয়েছিলো বলে স্থানীয়রা দাবি। যা স্বল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে যায় বলেও দাবি তাদের। কিন্তু ভরা শীত মৌসুমজুড়ে অতিথি পাখির দেখা পায়নি ভ্রমণ পিপাসুরা।
২০১৬ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীঘিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাখি শিকার, পরিবেশ ধ্বংসরোধে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। দীঘির পাড়ে হরিণের বিচরণ, পানিতে হাঁস চাষ শুরু করা হয়। কৃত্তিম বাঁধসহ নানান পশু-পাখির মূর্তি বসানো হয়।
সরকারি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কলেজের (চাখার) উপাধাক্ষ্য ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, অতিথি পাখি প্রাকৃতিক পরিবেশেই বেশি আশ্রয় নেই। কিন্তু দুর্গাসাগর ঘিরে এখন কৃত্রিমতাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। যান চলাচল করে পুকুরের পার ঘেঁষে। রাতে জ্বলে নানান ধরনের বাতি, আবার গাছগুলো অনেক লম্বা হয়ে যাওয়া ওদের জন্য আকাশও সংকুচিত হয়ে গেছে, খাদ্যের অভাব, আবহাওয়াগত তারতম্যও সৃষ্টি হয়েছে। তবে গবেষণা করে সকল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করা হলে পাখি আবার এখানে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমএস/এএটি