ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অস্তিত্ব সংকটে হাইল হাওরের ‘মেছো বাঘ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
অস্তিত্ব সংকটে হাইল হাওরের ‘মেছো বাঘ’ বিপন্ন মেছো বাঘ-ছবি-সংগৃহীত

মৌলভীবাজার: চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে মাছের উপর আশ্রয় করে বেঁচে থাকা স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘মেছো বাঘ’ বা ‘মেছো বিড়াল’। আমাদের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোতে মাছের ঘের বা মাছের খামার হয়ে যাওয়ায় ঘোর দুর্যোগ নেমে এসেছে এই প্রাণীদের উপর।

হাইল হাওরের অধিকাংশ এলাকা মৎস্য খামার হয়ে যাওয়ায় তাদের স্বাভাবিক খাদ্য আহরণ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাইল হাওরের প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে।

আর এতে মেছো বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, প্রাকৃতিক জলাভূমির মেছো বাঘগুলো তাদের প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা গাড়িচাপা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে। আবার কোনোটা পার্শ্ববর্তী হাঁসের খামার থেকে হাঁস ধরতে গিয়ে খামারিদের খাঁচায় আটকে মারা যাচ্ছে।  বিপন্ন মেছো বাঘ-ছবি-সংগৃহীততিনি আরও বলেন, হাঁস খেয়ে ফেলে বলে হাইল হাওরের খামারিরা মেছোবাঘগুলোকে মেরে ফেলেন। কেউ আমাদের খবর দিলে মেছোবাঘগুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আটকে পড়া খাঁচাটি পানির নিচে ডুবিয়ে রেখে মেছোবাঘগুলোকে নির্মমভাবে মারা হয়।

মেছোবাঘের খাদ্য সংগ্রহ সম্পর্কে সজল বলেন, মেছোবাঘ বড় বড় মাছ খায়। এরা ছোট মাছ খায় না। রাতের অন্ধকারে মেছোবাঘগুলো বিলের পাড়ের উপর দিয়ে খুব ধীরে ধীরে হাঁটে। বড় মাছ পাড়ের কাছে আসলেই পানিতে নেমে সেই মাছটি ধরে খায়। কিন্তু প্রতি বছর হাইল হাওরের বিলগুলো সেচ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে। ফলে বড় মাছগুলো আর বিলগুলোতে অবশিষ্ট নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মো. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মেছোবাঘ শুধু আমাদের জলাভূমিতেই নয়, এরা আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন। এর ইংরেজি নাম Fishing cat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina। শরীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০-৮০ সেন্টিমিটার এবং লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ১২-১৫ কেজি।

মেছোবাঘ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত, এদের খাদ্য সংকট তো রয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক জলাভূমি যখন থাকে তখন এর আশপাশে প্রচুর ঝোপঝাড় থাকে। দিনেরবেলা মেছোবাঘগুলো এই ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। দিনে ওরা বের হয় না। যখন মাছের ফিসারিজ হয় তখনও ঝোপঝাড়-জঙ্গল এগুলো সব পরিষ্কার করে ফেলা হয়। এর ফলে মেছোবাঘদের ‘হাইডিং প্লেস’ বা লুকিয়ে থাকার জায়গাও ধ্বংস হয়ে যায়। তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক জলাভূমির ঝোপঝাড় নষ্ট করে ফেলার ফলে এদের প্রজনন সমস্যাও মারাত্মকভাবে দেখা দিচ্ছে।

এই গবেষক আরও বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক জলাভূমির মেছোবাঘগুলো এসব কারণেই আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলোতে মেছোবাঘ পিটিয়ে হত্যার খবর পড়ি। এমনটি কখনও কাম্য হতে পারে না। জীববৈচিত্র্যের মূল্যবান এই প্রাণীটিকে রক্ষায় আমাদের সবাইকে যত দ্রুত সম্ভব এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।