সোমবার (৩ ডিসেম্বর) ২০০টিরও বেশি দেশের ২৪ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী এই আর্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন সেখানে। দুই সপ্তাহের এ সম্মেলন শেষ হবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর।
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানানো হয়েছে।
সম্মেলনে এরইমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া দেশগুলোকে সহায়তায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে কবে নাগাদ, কিভাবে এই টাকার সংস্থান ও ব্যবহার হবে তা জানায়নি সংস্থাটি।
সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেন, স্পষ্টতই আমরাই হলাম শেষ প্রজন্ম যারা জলবায়ু পরিবর্তনের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারি, তাছাড়া আমরাই প্রথম প্রজন্ম হিসেবে এর ভয়াবহ প্রভাবেরও শিকার।
এর আগে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ব নেতারা। ওই বিবৃতিতে ১৯ বিশ্বনেতা স্বাক্ষর করলেও এতে স্বাক্ষর করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সম্মেলনের আগে রোববার (২ ডিসেম্বর) এক জরুরি বৈঠকে বসেন জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সাবেক চার প্রধান।
বৈঠকে তারা বলেন, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব। কেবলমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বিশ্ব এখন এক সংকটময় বাঁকে অবস্থান করছে। এই পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। কালক্ষেপণই হবে, নিজের জন্য, বিশ্বের জন্য আত্মঘাতিমূলক!
বিগত জলবায়ু সম্মেলনগুলোর সাবেক সভাপতিরা এক যৌথ বিবৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর ক্যাটওয়াইচের এ বৈঠককে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি বাস্তুবায়ন শুরু হওয়ার আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে বিশ্বকে। এজন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। যদিও গত দুই বছরে এর অগ্রগতি নেই কিছুই। উল্টো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তির বাইরে নিয়ে গিয়ে পুরো চুক্তিকেই বিপদের মুখে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বকে প্রত্যাশিত জায়গায় রাখতে হলে কার্বন নিঃসরণ ব্যাপক হারে কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ব্যাপক চাপের মুখে বিশ্ব জলবায়ু সংস্থার চার সাবেক প্রধান কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ কপ-২৪ শুরু হওয়ার একদিন আগেই সমবেত হন।
গত অক্টোবরে ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি ঠেকাতে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটি কপ’র (সিওপি) প্রথম সম্মেলন।
এ পরিস্থিতিতে রোববার জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক চার সাবেক প্রধান এক বিবৃতিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ফিজির ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা, মরক্কোর সালাহেদিন মেজুয়ার, ফ্রান্সের লোহো ফেবিউস ও পেরুর ম্যানুয়েল পুলগার।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক পটভূমি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে। এদিকে ব্রাজিলে সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করার ঘোষণা দেওয়ায় জাতিসংঘের নেওয়া প্রক্রিয়াকে আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প।
কারিতাস ইন্টারন্যাশনালের আদ্রিয়ানা অপরোমোলা সূচনা বক্তৃতায় বলেন, প্রতিদিন গোটা বিশ্বের দরিদ্র ও মানবেতর জীবনযাপন করা ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন। এর রুপান্তর সম্ভব কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে এই পরিবর্তনকে সম্ভব করতে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
আরএম/আরআর