গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সামুদ্রিক কাঁকড়ার নিজস্ব খোলস থাকে না। নিজেদের সুরক্ষায় তারা সাধারণত শামুক-ঝিনুকের পরিত্যক্ত খোলসের ভেতর বসবাস করে এবং বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক খোলস ছেড়ে আরেকটিতে আশ্রয় নেয়।
প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের সঙ্গে কাঁকড়ারা মোটেও অভ্যস্ত নয়। একারণে এসব থেকে কীভাবে বের হতে হয় সেটি তারা বুঝতে পারে না। ফলে একবার প্লাস্টিকের ভেতর ঢুকলে এর মধ্যে আটকা পড়ে না খেয়েই মারা যায় কাঁকড়ারা।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, ভুল করে একবার একটি কাঁকড়া প্লাস্টিকের মধ্যে আটকা পড়ে মারা গেলে তা থেকে রীতিমতো চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। কোথাও কাঁকড়া মারা গেলে অন্য কাঁকড়াদের কাছে সংকেত যায়, সেখানে একটি খোলস খালি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য কেউ এসে সেই জায়গা দখল করে। এভাবে একটির পর একটি মারা যেতে থাকে।
সম্প্রতি কাঁকড়াদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম ও ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার ইনস্টিটিউট ফর মেরিন অ্যান্ড অ্যান্টার্কটিক স্টাটিজের (আইএমএএস) বিজ্ঞানীরা। এতে সহযোগিতা করেছে বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ‘টু হ্যান্ডস প্রজেক্ট’।
তারা প্রশান্ত মহাসাগরের হেন্ডারসন দ্বীপ ও ভারত মহাসাগরের কোকোস (কেইলিং) দ্বীপে কাঁকড়াদের নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। এতে দেখা যায়, কোকোস দ্বীপে ৫ লাখ ৮ হাজার ও হেন্ডারসন দ্বীপে ৬১ হাজার কাঁকড়া প্লাস্টিক বর্জ্যে আটকা পড়ে আছে। অর্থাৎ সেখানকার প্রতি বর্গমিটারে এক থেকে দু’টি কাঁকড়া প্লাস্টিকে আটকা পড়ছে।
ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের সিনিয়র কিউরেটর ইনচার্জ ড. অ্যালেক্স বন্ড বলেন, সমস্যাটা খুবই গুরুতর। কারণ এর জন্য লাগে মাত্র একটি কাঁকড়া।
তিনি বলেন, সামুদ্রিক কাঁকড়াদের নিজস্ব খোলস থাকে না। এর মানে যখন স্বগোত্রীয় কেউ মারা যায়, তারা একধরনের রাসায়নিক সংকেত ছড়ায় যে ‘এখানে একটি খোলস খালি আছে। ’ এতে আরও কাকঁড়ারা আকর্ষিত হয়ে কন্টেইনারে পড়ে মারা যায়, যারা সংকতে পাঠায় ‘অনেক খোলস খালি আছে’। এটি খুবই ভয়ংকর চেইন রিঅ্যাকশন।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া আইএমএএস-এর গবেষক ড. জেনিফার লেভারস বলেন, এই ফলাফল বেদনাদায়ক হলেও আশ্চর্যজনক কিছু নয়। যেসব সমুদ্রসৈকত ও উদ্ভিদের ওপর তারা নির্ভরশীল তার চারপাশে অসংখ্য বন্যপ্রাণী রয়েছে। এটা অবশ্যম্ভাবী যে, এসব প্রাণী একে অপরের সংস্পর্শে আসবে ও প্লাস্টিক দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
একে