মানুষের নজরে এসে বা মানুষের হাতে ধরা পড়ার বোঝা যায় তাদের সেই সুনির্বাচিত ‘লুকানো’র স্থানটিও ছিল সম্পূর্ণ ভুল!
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজার কলার আড়ৎ থেকে একটি সবুজ ফণিমনসা সাপ (Green Cat Snake) উদ্ধার করেছে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এ প্রজাতির সাপগুলো নিশাচর এবং তারা গাছে গাছে চরে বেড়াতে বেশ পারদর্শী।
বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বাংলানিউজকে বলেন, ঠাণ্ডা ও নিরিবিলি জায়গা পেয়ে সাপেরা কলার ছড়াকেই তার আশ্রয় হিসেবে নির্বাচন করে। আড়ৎদার যখন কলার ছড়াগুলো কিনে কেটে নিয়ে আসে তখন তার মধ্যে সাপও চলে আসে। কোনো বন্দি ঘরে যখন ছড়িগুলো রাখা হয়, তখন প্রাকৃতিক পরিবেশের অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে সাপটি নিজ থেকেই ছড়া হতে বের হয়ে যায়। তখন আড়তদার সাপ দেখে ভয় পেয়ে আমাদের খবর দেয়।
সবগুলো মিলিয়ে এ যাবত প্রায় আট-দশটি সাপ আমরা কলার আড়ত থেকে উদ্ধার করেছি। খবর পেয়ে শনিবার রাতে অনুরূপ একটি সবুজ ফণিমনসা সাপ ধরে নিয়ে এসেছি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট। ক’দিন পর তাকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে বলে জানান সজল।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, কলার ছড়াতেই মিলছে গেছো সাপের সন্ধান- এর কারণ হলো শীতকালে সাপ হাইবারনেশনে (শীতনিদ্রা) যায়। যেসব সাপ ‘ট্রি স্নেক’ বা গেছো সাপ তারা শীত থেকে বাঁচার জন্য কোনো একটা গর্তের ভিতরে লুকিয়ে থাকে। কলা গাছের ছড়ার ভিতরে সাপ নিজেকে শীত থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে রাখে। এটাই হলো তাদের হাইবারনেশন।
আদনান আরও বলেন, অন্য মৌসুমে যদি অনুরূপভাবে কলার ছড়ায় সাপ পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে খাবার খেয়ে তারা কিছুদিনের জন্য কলার ছড়ার নিরাপদ স্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। কারণ মানুষ যেভাবে গাছপালা কাটা শুরু করেছে তাতে গেছো সাপেদের জীবন এখন মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে। যখন আপনি শুকনো গাছগুলো কেটে ফেলবেন তখন তারা কোথায় এসে লুকাবে? তখন তারা এই কলার ছড়ার ভিতরেই নিজেকে লুকানোর জন্য পছন্দ করে।
নরমাল সাপ অর্থাৎ যারা মাটিতেই ঘুরে বেড়ায় তারাও কিন্তু মাটির গর্তে গিয়ে হাইবারনেশন করে। আর ট্রি-স্নেকগুলো এখন নিরাপদ হিসেবে আশ্রয় নিচ্ছে পাহাড়ি এলাকার কলার ছড়ায় বলে জানান আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
বিবিবি/এএ