এই নাতিশীতোষ্ণ নিরাপদ ভূমি হিসেবে এই পরিযায়ী পাখিরা চলে আসে জাবিতে। ফলে শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে এই সবুজ নগরী।
প্রতিবছর নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে আসে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে থাকে- সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতি। এ বছর শীত শুরু হতে না হতেই, অক্টোবরের শুরু থেকেই বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এসব পরিযায়ী পাখি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যেসব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট কিংবা বড় সরালি। আর বাকি দুই শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।
লাল মাটি ছেঁদ করে গড়ে ওঠা সবুজের এই লীলাভূমিতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৬টি লেক বা জলাশয় আছে। এর মধ্যে চারটি লেকে আবাস গড়ে হাজারো পরিযায়ী পাখি। যাদের অনেকেই ভালবেসে অতিথি পাখিও বলে থাকে। সবুজ গাছপালা আর দিনভর লেকের জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো আর জলকেলি খেলা চলতেই থাকে। পুরোটা সময় তাদের খুনসুটি আর ছোটাছুটি মাতিয়ে রাখে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জাবির ঘুম ভাঙে এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর সন্ধ্যা। চলতে থাকে পাখিদের কিচিরমিচির ও দলবেঁধে ছুটে চলা। সন্ধ্যা নামার পরপরই লেকগুলোতে নেমে আসে পিনপতন নিরবতা। রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ক্ষণিকের আবাস গড়ে তোলে গাছের ডালে। ভোর হতে না হতেই আবার শুরু হয়ে যায় তাদের ছুটে চলা। রক্তকমল লাল পদ্ম ও শাপলার বেষ্টিত লেকে খাবারের জন্য ছোটুছুটি। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে জাবিতে পরিযায়ী পাখি।
পাখি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এবছর একটা দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। ফলে উৎপাত কম হয়েছে। আর এ কারণেই হয়তো বেড়েছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। তবে দর্শনার্থী এবং যানবাহনের উৎপাত কম থাকলে আরও বেশি পাখি আসবে বলে ধারণা করছি। এবছর এখন পর্যন্ত ছোট সরালি, বড় সরালি এবং লেঞ্জা হাঁসের দেখা মিলছে। মানুষের উৎপাত কম থাকলে বৃদ্ধি পাবে পাখির সংখ্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এবার কিছু সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থী কম ছিল। ফলে অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এখন আমাদের এটা ধরে রাখার দায়িত্ব। বিগত বছরের ন্যায় আমরা এবারও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোসহ নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছি। যাতে করে কেউ এসব পাখিদের উৎপাত না করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
এএটি