বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বাতাসে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের উপর দিয়ে ৫-৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে কয়েকটি জলযান, ওয়াচ টাওয়ার, গোলঘর, রাস্তা, ফুট রেইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও খালে পানি বাড়তে থাকে। বুধবার (২৬ মে) প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। পানির তোড়ে পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ১০টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে ইয়াসের বাতাসে। সুন্দরবনের মধ্যে সুপেয় পানির সংস্থান হিসেবে পরিচিত ৯টি পুকুরের লবন পানি প্রবেশ করেছে। সুন্দরবন থেকে দুটি এবং লোকালয় থেকে ২টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুটি কুমিরের শেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হিসেবে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র করমজলের কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয়নি।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসে কুমিরের দুটি শেড নষ্ট হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বন্য প্রাণীগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এ যাত্রায় আমাদের কোনো বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়নি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমাতিথির জোয়ারের কারণে বনে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এই পানিতে বনের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রাজেশ্বরে একটি হরিণের, উত্তর তাফালবাড়িতে একটি, সুন্দরবনের দুবলা ও কচিখালী এলাকায় একটি করে হরিণের মরদেহ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আর কোনো বন্যপ্রাণী মৃত্যুর খবর পাইনি আমরা।
এদিকে সেব দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ঝড় জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। তবে আমাদের রক্ষা করলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সুন্দরবন। ইয়াসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত আমরা পাঁচটি হরিণ মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আসলে যে পরিমাণ জলোচ্ছ্বাস হয়েছে আরও বেশি প্রাণীর প্রাণহানি ঘটছে হয়তো। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন রক্ষায় বাস্তবভিত্তিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সুন্দরবনের মধ্যে পুকুর খনন করে বন্য প্রাণীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পারে যে উঁচু জায়গা থাকবে সেখানে যাতে বন্য প্রাণীরা থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রবল পানির তোড়ে আমাদের বেশকিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। দুটি অফিসের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে টাকার অংকে সুন্দরবনের প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এটা প্রাথমিক ধারণা আরও বাড়তে পারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। কারণ এখন পর্যন্ত সব জায়গা যেতে পারেনি আমাদের কর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে এবারের ঝড়ে তেমন কোন গাছপালা ভেঙে যাওয়ার খবর পাইনি। তবে চারটি হরিণ মারা গেছে। একটি জীবিত হরিণও উদ্ধার করে বনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এর বাইরে হয়ত আরও কিছু বন্যপ্রাণী বা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।
এছাড়া ইয়াসের প্রভাবে প্রাণহানির শঙ্কায় সোমবার (২৪ মে) সরিয়ে নেওয়া পূর্ব সুন্দরবনের যে আটটি টহল ফাঁড়ির কর্মীদের পুনরায় সেখানো পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
এনটি