ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

গান আর কবিতায় মিশে থাকা ‘পারুল’ আবারও ফিরবে স্পর্শে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
গান আর কবিতায় মিশে থাকা ‘পারুল’ আবারও ফিরবে স্পর্শে পারুল ফুল। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: বাংলার গান ও কবিতায় আজও মিশে আছে 'পারুল'। সাহিত্যের বিভিন্ন জায়গায় পারুল ফুলের স্থান থাকলেও বাস্তবে অদৃশ্য প্রায়।

দীর্ঘদিন আগে প্রকৃতির মাঝে থেকে হারিয়ে গেছে 'পারুল'।  

তবুও প্রকৃতিপ্রেমীদের আগ্রহের শেষ নেই এই ফুল নিয়ে। এখনো ‘ও সাতভাই চম্পা জাগোরে’ গান শুনে ব্যথিত হোন অনেকে। তাই অনেক দেরিতে হলেও এবার এই পারুল গাছের চারা তৈরি নিয়ে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক অপূর্ব কুমরা রায়। এরই মধ্যে তিনি অনেকটা সফলতাও পেয়েছেন। পুরোপুরি সফল হলে হয়তো প্রকৃতিপ্রেমীদের পারুলকে হারানোর ব্যথা একটু হলেও লাঘব হবে। গবেষক অপূর্ব কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, একটি গাছের খণ্ডিত অংশ থেকে আরেকটি নতুন গাছ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে সেটিকে সরক্ষণও করা যাচ্ছে। এটিকে আরও দ্রুত তৈরি কারার প্রক্রিয়া চলছে। সেটি সম্ভব হলে পারুল আর বিরল থাকবে না। তখন প্রকৃতিপ্রেমীরা এটির চারা নিয়ে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলা লোকসাহিত্যের অনন্য একটি ফুলের নাম হলো পারুল। এটিকে কবিতা ও গানে বেশ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অনেক সাহিত্যপ্রেমীরাও এই ফুলকে হয়তো দেখেননি। আমাদের গবেষণা শেষ হলে অনেকেই এটিকে ছুঁয়ে দেখার বা স্পর্শ করার স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতে পাবেন। পারুলকে দেখে আবার সবাই মুগ্ধ ও আনন্দিত হবেন এটিই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, পারুল 'Bignoniaceae' পরিবারভুক্ত। বর্তমান বৈজ্ঞানিক নাম ‘Stereospermum cheloniodes’ আগের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Stereospermum suaveolens’। ইংরেজি নাম ‘Trumpet’। পারুলের আদি নাম পাটল। পাটল একটি রঙের নাম। পাটল থেকে পাড়ল-পারল-পারউল-পারুল নামে পরিবর্তিত হয়েছে। ঘন গোলাপি থেকে বেগুনি পাপড়িতে অপূর্ব রূপ মাধুর্য রয়েছে পারুলের। এটি সুগন্ধি ফুলের মধ্যের অদৃশ্য অংশ হলদেটে। এটির গাছ মাঝারি আকৃতির হয়। বৈশাখ মাসের শুরুতে কচি পাতার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফুটতে শুরু করে। শোভা ছড়ানো পারুলতায় প্রতিদিন বসে ঝরা ফুলের মেলা। তবে অন্য অনেক গাছের মতোই শীতকালে পারুল গাছের সব পাতাও ঝড়ে যায়। কবিতা ও সাহিত্যে পারুল ফুলের উপস্থিতি থাকার কথা জানিয়ে কবি শামীম হোসেন বলেন, 'বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় এই পারুলের উল্লেখ আছে। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানেও এটির নাম বেশ পাওয়া যায়। তবে এটিকে বাস্তবে দেখা হয়নি অনেকেরই। বিরল হলেও এই ফুল প্রকৃতির মধ্যে আবারও ফিরে আসুক। কারণ পারুলকে নতুন করে দেখে স্পর্শ করতে চাই, আমরাও মুগ্ধ হতে চাই'।

রাজশাহী কবি কুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার বাংলানিউজকে বলেন, বিখ্যাত একটি গান ও সিনেমা হলো ‘সাত ভাই চম্পা জাগোরে’। সেখানে পারুল বোনের কথা আছে। তবে আমাদের জন্মের আগেই হয়ত পারুল প্রকৃতির মাঝ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরপরও সাহিত্যে পারুলের ব্যাপক উপস্থিতি আছে। তবে বাস্তবে দেখা যায় না আর। প্রকৃতির মধ্যে পারুল ফিরে আসলে নতুন করে কবিতা ও গানের সৃষ্টি হবে। এতে আমদের সাহিত্য আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। তাই দ্রুতই পারুল ফিরে আসুক, আবারও প্রকৃতির মধ্যে সুবাস ছাড়াক। নতুন গবেষণা থেকে এটাই প্রত্যাশা'।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।