ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আবহমান বাংলার প্রাকৃতিক প্রতিনিধি ‘বেনেবউ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
আবহমান বাংলার প্রাকৃতিক প্রতিনিধি ‘বেনেবউ’ হলদে-কালোর শোভা ছড়ানো কালামাথা-বেনেবউ। ছবি: তিমু হোসেন

মৌলভীবাজার: গাছে-গাছে ডালে-ডালে আবহমান বাংলার সার্থক প্রাকৃতিক প্রতিনিধি হয়ে ঘুরে বেড়ায় বেনেবউ। এ যেন সবুজের মধ্যে একটু হলুদে রঙের হঠাৎ আগমন।

দেখতে খুবই ভালো লাগে!

এই গাছ থেকে ওই গাছে তার বিস্তার শুধুই যে সৌন্দর্যের জানান দেয় তা নয়। প্রাকৃতিক সুস্থতার দিকটিও ফুটিয়ে তোলে। স্থানীয় প্রকৃতি সুস্থ আছে বলেই তাদের প্রজনন এবং বিচরণে এ সফলতাটুকু এসেছে।  

বিশেষত চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোতে তাদের বিচরণ ছায়াদানকারী বড়, মাঝারি কিংবা গাছের ডাল ছুঁয়ে। এখানেই তাদের সৌন্দর্যকে দারুণভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ থাকে। সেই সঙ্গে প্রজনন মৌসুমের ডাক। অর্থাৎ পুরুষ পাখি তার সাংসারিক সাথী স্ত্রী পাখিটিকে খোঁজে নেবার দারুণ আকুতি। যা চা বাগানের প্রসারিত সৌন্দর্য ছাপিয়ে অন্য এক অনুভূতির জানান দেয়।

আমাদের প্রকৃতির পাখিদের সঙ্গেই মানুষের অস্পর্শ এবং দূরত্বের সখ্যতা বা দারুণ এক ভালোলাগে গড়ে উঠে। মানুষ তখন তার নাম জুড়ে দেয়। বেনেবউ-এর বেলাও তাই হয়েছে। তার দেহের হলুদ রঙের কারণে একে কেউ কেউ ‘হলদে পাখি’ বা ‘হলদিয়া’ বলেন। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন ‘কুটুমপাখি’, ‘ইস্টিকুটুম’, ‘সোনারঙের পাখি’। এ সবই যেন মানুষের ভালোবাসার প্রিয় একেকটি নাম। দেশের নানান অঞ্চল ভেদে এই নামগুলোই মানুষের মুখে মুখে প্রতিধ্বনিত হয়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায় ‘বেনেবউ’ (Oriole) পাখিরা স্বভাবেও বেশ স্নেহময়ী। ‘পাতি-চোখগেলো’ পাখি (Common Hawk cuckoo) যখন বেনেবউয়ের বাসায় লুকিয়ে এবং সবার অলক্ষ্যে ডিম পেড়ে যায়, তখন সেই ডিমে সার্বক্ষণিক তা (প্রজনন পদ্ধতি) দিয়ে ছানা (পাখির বাচ্চা) তুলে তাকে পুরোপুরি বড় করে তোলার দায়িত্বটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে ওরা। তবে পাতি-চোখগেলোর একটি ছানাকে বড় করতে গিয়ে নিজের দু/তিনটি ছানা পালার মতোই খাটুনি করতে হয় বেচারা বেনেবউকে। মাতৃস্নেহেরও এটি এক অনন্য উদাহরণ।

আমাদের দেশে প্রায় চার-পাঁচ রকমের ‘বেনেবউ’ (Oriole) পাখির বিচরণ রয়েছে। দারুণ উজ্জ্বল হলুদ দেখতে এই পাখির দেখা মেলে দেশের প্রায় সর্বত্র। কাঁচা সোনা রঙের সঙ্গে পাখিটির আদুরে চালচলন আর সুরের বৈচিত্র্য সবার মন কেড়ে নেয়।

এখানে যে বেনেবউ পাখিটির ছবিগুলো প্রকাশিত হয়েছে এর নাম ‘কালামাথা-বেনেবউ’। Black-hooded Oriole এ পাখিটির ইংরেজি নাম। এই ছবিগুলো তুলেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বটলব্রাশ ফুলের ডালে ডালে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। আর সেই ব্যস্ততার সাক্ষী হিসেবে সেই ফুলের হলুদ রেণু তার ঠোঁটের আশপাশে লেগে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিমু হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কালামাথা-বেনেবউ পাখি আকারে আমাদের ভাত-শালিক পাখির মতো। প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। মাথা আর ডানার উপরের অংশটুকু ছাড়া ওর পুরো শরীর হলুদে। ও যখন ডালে ডালে বা পাতার আড়ালে থাকে তখন সহজেই দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ওর উপর। খুঁজে নিতে বেগ পেতে হয় না।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
বিবিবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।