ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ফল রক্ষার ফাঁদে মারা পড়ছে পাখি!

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
ফল রক্ষার ফাঁদে মারা পড়ছে পাখি! জালে আটকা পড়া পাখি। ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামের আহসান হাবির দেড় একর জমিতে আম, জাম ও নানা ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন।

এই বাগানে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক, বুলবুলি পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি এসে ভিড় করে।

পাখির হাত থেকে ফল রক্ষার জন্য গাছ জাল ও নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এতে ফল খেতে আসা প্রাণীগুলো জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে। পাখির মধ্যে শালিক ও বুলবুলির সংখ্যাই বেশি। পাখি হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বাগানের ফল পাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য এভাবে জাল ও নেট দিয়ে ঢেকে দেন বাগান মালিক। এতে বিভিন্ন ধরনের পাখি সেই জালে আটকা পড়ে মারা যায়। পাখি ক্ষেতের কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। আর এই ফল রক্ষার জন্য এভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে ওই ফল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ফল রক্ষার জন্য বাগানের গাছগুলো জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। জালে পাখি আটকে মারা যাচ্ছে। বাগানের পাশে আটকে পড়া পাখি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আবার ভয় দেখানোর জন্য সেই মৃত পাখি লাঠির মাথায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবিব, এক সময় কোরিয়া প্রবাসী ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি বাড়ির পাশে দেড় একর জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তোলেন। এই বাগানে ৪০টি জাম গাছ ও ৭০টি আম গাছ আছে।

স্থানীয় লিমন নামে এক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, ফল রক্ষার জন্য দেওয়া জালে আটকা পড়ে পাখি মারা যাওয়া আমাদের জন্য বিপদ। কারণ পাখিরা আমাদের ফসলের ক্ষেতের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। পাখি হত্যা বন্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বাগান মালিক আহসান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, বাগানের ফল রক্ষার জন্য জাল দেওয়া হয়েছে। এরপরও পাখি ফল নষ্ট করছে। ছোট ছোট ছেলেরা না বুঝে পাখি তাড়াতে গিয়ে দুই একটি মেরেও ফেলছে। আমি কখনো পাখি মারি না। পাখি অনেক ফল নষ্ট করে।

ইলিয়াস হোসেন নামে এক প্রকৃতিপ্রেমী বাংলানিউজকে বলেন, ফল বাগানে যেভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে, এটা অন্যায়। এতে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে। হুমকিতে পড়বে আমাদের জীববৈচিত্র্য।

উপকূলীয় বন কর্মকর্তা ও উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী কর্মকর্তা আবদুল্লা আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বন্যপ্রাণী আইনে ফাঁদ পেতে কোনো প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ। কোনো ব্যক্তি যদি এমন করে পাখি হত্যা করে তা বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ফলন রক্ষার জন্য কোনো প্রাণী হত্যা করা যাবে না। বন বিভাগ ও সদর ইউএনওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে দেওয়া হবে। পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য উপকারী। এরা ক্ষেত খামারের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।