ঢাকা: নগরীতে শীত নামার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ওয়ালে ভেসে আসছিল- কোথায় খেজুরের রস পাওয়া যায়? ফেলে আসা গ্রামীণ স্মৃতি খেজুর রসের স্বাদ নিতে ব্যাকুলদের জন্যই ছিল শুক্রবারের (৬ জানুয়ারি) সকালটা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় খেজুর রসের সঙ্গে মুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছেন তারা।
সাংস্কৃতিক সংগঠন রঙে ভরা বঙ্গ আয়োজন করে ১২তম এই রস মেলার। সকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।
হায়াৎ মামুদ বলেন, এই রসের উৎসবে যারা এসেছেন, তারা সকলেই নিজের স্মৃতি, গ্রাম-বাংলা, খেজুরের রস ভালোবেসে এখানে এসছেন। পৃথিবীতে ভালোবাসাটাই আসল।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রস উৎসব আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুসঙ্গ। ইট-পাথরের শহরে 'রঙে ভরা বঙ্গ' এ গ্রামীণ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যান্ত্রিকতার এ নগরীতে এখন খেজুর রসেও ভেজাল দেখা দিয়েছে। এছাড়া কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ ও ইউডার চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ।
এ সময় তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনো খেজুর রসের উৎসব হয়। এই উৎসবে এসে ফেলে আসা শৈশবের কথা স্মরণ করি। একটা সময় এই রস ছিল অনেকের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এখন আয়ের উৎস বেড়ে যাওয়ায় এটি কমে গেছে। আজ এই উৎসবে এসেছি শেকড়ের টানে। আমাদের বাঙালিয়ানার অনেক সমৃদ্ধ উপাদান আছে। সেই উপকরণগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সংস্কৃতির সুরক্ষায় এই ধরনের উৎসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন ‘১২তম রস উৎসব ও লোকশিল্পী সম্মাননা ১৪২৯’ এর আহ্বায়ক ডা. শওকত আরা হায়দার। সূচনা বক্তৃতা করেন 'রঙে ভরা বঙ্গ' এর পরিচালক ইমরান উজ জামান।
অনুষ্ঠানে হস্তশিল্পে পাবনার চাটমোহরের হস্তশিল্পী কৃষ্ণা বেত এবং লোক পরিবেশনায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের পাঁচঠিকরির ফটিক শেখের ভাসান গানের দলকে লোকশিল্পী সম্মাননা ১৪২৯’ প্রদান করা হয়।
মেলায় আসা সকলকে খেজুরের রস, খেজুরের গুড়, খই, মুড়ি ও রসের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাটিতে খেজুর গুড় ও খই-মুড়ি খেতে খেতে নানা রসবোধে মেতেছিলেন অনেকেই। তাদের সে রসবোধকে আরও মিঠে করে তোলে পোড়ামাটির গ্লাসে কুয়াশামাখা খেজুর রসের মিঠে স্বাদ।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে সকালেই সস্ত্রীক এসেছিলেন হাসনাত শাহীন। কথা হলে তিনি বলেন, এই মেলায় এসে অনেক বছর পর খেজুরের রসের স্বাদ পেলাম। এমন আয়োজন আরো বেশি বেশি হোক, এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএস