মৌলভীবাজার: অনেকটা অবহেলাই বলতে হবে। কারণ, যত্ন বা পরিচর্যা কিছুই মেলেনি।
সকালটাকে সার্থক করে তুলতে এখানেই ছুটে আসছে মৌমাছির দল। বেগুনির গালে মৃদু পরশে পূর্ণ করছে মধু সংগ্রহের নিভৃত পর্ব। যা চোখজুড়ানো দারুণ ভালোলাগার জন্ম দিয়ে যায়।
কিছু প্রজাতির ফুল রয়েছে যারা দুই ঋতু ঘিরেই নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে। অর্থাৎ তিন থেকে চার মাস অবধি তার প্রস্ফুটিত দাপট! মৌমাছি, ভ্রমর, প্রজাপতিদের সে আমন্ত্রণ জানানো পাশাপাশি অবলীলায় আপন শোভায় মুগ্ধ করে চলেছে পথচারীদের।
বর্ষা ঋতুর ভালোবাসাময় বৃষ্টির পরশে জন্ম হয়েছিল ‘ছোট জারুল’ ফুলটির। শরৎ ঋতু পর্যন্ত দিব্বি বেঁচে থাকতে পারে প্রকৃতিতে। একের পর এক ফুল ফুটিয়ে নিজেকে অপূর্বভাবে সাজায়। এটি শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ। গাছের উচ্চতা প্রায় ছয় মিটার। এর আদি নিবাস চীন।
‘জারুল’ ফুলকে অনেকেই কম-বেশি চিনে থাকেন। কিন্তু ‘ছোট জারুল’ ফুলটিকে তেমনভাবে অনেকেই চেনেন না। আর গাছটিকেও দেখা যায় না তেমন। ছোট জারুলের অনেক নাম বিচিত্র রয়েছে।
যেমন: ‘তিলা জারুল’, ‘জলধর’, ‘তিনিশ’, ‘চক্রী, প্রভৃতি। তবে আশ্চর্যের বিষয় – অপূর্ব সুন্দর এই ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘ফুরুশ’ নামক এমন উদ্ভট শব্দেও উল্লেখ করে থাকেন!
‘ছোট জারুল’ ফুলের ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান লিলাক ( Indian Lilac) এবং বৈজ্ঞানিক নাম - লাজাস্ট্রইমিয়া ইন্ডিকা ( Lagerstroemia indica)।
ডালের মাথায় বেগুনি রঙের বড় বড় থোকাযুক্ত ফুল ফুটে থাকে। একেকটি ফুল ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। ফুলের পাপড়ি সংখ্যা ৬টি। তবে পাপড়িগুলো কুঁকড়ানো।
সম্প্রতি এক সকালে এই ফুলগাছটির পাশে গিয়ে দেখা গেল ফুলগুলো ঘাসের উপর অবহেলায় পড়ে আছে। সবুজ রঙে দীর্ঘকায় ঘাসের উপর বেগুনি রঙে থোকা থোকা শোভা। প্রকৃতি যেন এভাবেই ঘাস হয়ে গিয়ে তার প্রিয় ফুলটিকে আপন বুকে মেলে ধরেছে!
বরেণ্য উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রকৃতি গবেষক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদ এ ফুল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ছোট জারুল ঔষধিগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। উষ্ণবীর্য, কফ এবং রক্ত অতিসারনাশক। এছাড়াও মলসংগ্রাহক, দাহজনক এবং শ্রেষ্ঠ বায়ুরোগনাশক। এর পাতা ও ফলের মধ্যে রয়েছে ইলাজিটানিস, এলামাইন এবং মেনথালিন। ’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পুরোনো পাতায় আছে হাইপোগ্লাইকেমিক, যা অনেকটা ইনসুলিনের মতো কাজ করে থাকে। এর পাতার রস ডায়াবেটিস রোগের উপকারী বলে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩
বিবিবি/এসএএইচ