ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

মধ্যরাতের কলার বাজার

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:০৭, জুলাই ৮, ২০১২
মধ্যরাতের কলার বাজার

ঢাকা: শনিবার রাত আড়াইটা। তখন দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিল।

তবে  আকাশ পরিষ্কার থাকায় অনেকটা সাহস করেই সহকর্মী আলোকচিত্রী সোয়েব মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে বেরুলাম রাতের ঢাকায় খবরের সন্ধানে।

অফিস থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে আমাদের বাইক। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেট পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম প্রগতি স্বরণী দিয়ে। কতদূর যেতেই শোয়েব মিথুন হঠ‍াৎ বাইক থামালেন। জায়গাটি ওই এলাকার নদ্দা ও নতুনবাজার বাসস্টপেজের মাঝামাঝি, কোকাকোলা নামেই পরিচিত।

চোখ ঘুরিয়েই যা দেখলাম, তাতে আমি খানিকটা বিস্মিত। কারণ এই মাঝরাতেও এক জমজমাট হাট। একত্রে ১০-১৫ জন মানুষ বড় বড় ছড়ি থেকে কলা বিচ্ছিন্ন করে বাঁশের মাচায় সাজিয়ে চলেছেন।

বাইক থেকে নেমেই কথা হলো কলা ব্যবসায়ী ইন্নছ আলীর সঙ্গে। তিনি জানালেন মাঝরাতের এই কলার হাটের অনেক তথ্যই।

ইন্নছ আলীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ গ্রামে। বেশ কয়েক বছর ধরে এই কলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কলা কিনে এখানে বিক্রি। রাস্তার পার্শ্বে রাতের অস্থায়ী এ বাজার শুরু হয় রাত ১২টায়, চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত।

এ হাটের সিংহভাগই কলা আসে কাপাসিয়ার শীতলক্ষা তীরবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। তবে আমরাইদ, খিরাটি, বারিষাব, বড়হর, ঘাগটিয়ায় কলার উৎপাদন বেশি। এখানকার লালমাটিতে উৎপাদিত এসব কলা বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু, তাই চাহিদাও বেশি। তাই বাজারে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতাদের (পাইকারদের) ব্যস্ততা বেড়ে যায় এসব কলা কেনার জন্য।

ইন্নছ আলীর দাবি, এসব কলা পাকাতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় না। তবে কলা গাছ থেকে ছড়ি কাটার পর তোষ বা কাঠের গোড়া দিয়ে একটি বিশেষ উপায়ে অল্প সময়ের জন্য আগুনের তাপ দেওয়া হয়। তাতেই কলা পাকতে শুরু করে এবং বাজারজাত করার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

কাপাসিয়া থেকে আসা এসব কলার মধ্যে প্রধানত: তিনটি জাত হচ্ছে- সবরি, সাগর ও চাম্পা কলা।

ইন্নছ আলী জানান, ২৫-৩০ হালির এক ছড়ি কলার দাম কমপক্ষে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা, চম্পা কলার ১৬-২০ হালির এক ছড়ি দাম আড়াই থেকে সাড়ে তিনশ এবং একই পরিমাণের সাগর কলার দাম ৩ থেকে ৪শ টাকার মধ্যে।

সপ্তাহে অন্তত: দু’বার কলা নিয়ে ঢাকায় আসেন ইন্নছ আলী। প্রতিবার ২ থেকে ৩শ ছড়ি কলা নিয়ে আসেন। কেমন লাভ থাকে জানাতে চাইলে তিনি জানান, আসল বাদে প্রতি ট্রিপে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা।

জানা গেলো, রাজধানীর বিশ্বরোড থেকে রামপুরা-মালিবাগ পর্যন্ত খুচরা দোকানদাররা কিনে নেন এসব কলা। কেউ গভীর রাতে সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আবার কেউ পাইকারদের কাছ থেকে এসব কলা কিনেন।

এখানে কলা কিতে আসা তেমনি এক পাইকার মো. সবুর মিয়া। তিনি জানালেন, প্রতিদিন রাতে এখানে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২২ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।