মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএন দর্শকদের ভোটে বিশ্বের নিকৃষ্টতম ১০টি শহর নির্বাচন করেছে। শীর্ষ বাজে শহরগুলোর তালিকায় এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, আফ্রিকার দেশ মিশরের রাজধানী কায়রোর সঙ্গে আছে দেশের সেরা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেল্স, ইউরোপের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস আর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি।
১০. বেলিজ সিটি, বেলিজ: একটি শহর নিকৃষ্ট হতে যে সব বিষয় অপরিহার্য তার যেন সবকিছুই রয়েছে বেলিজ শহরে। অপরাধ, চোরাকারবারী কার্মকাণ্ড, হত্যা, গুম এর সবই এখানে একসঙ্গে পাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। এক কথায় অপরাধের কি নেই এখানে। পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বাজে বিমানবন্দরটিও বেলিজের দখলে।
৯. কায়রো, মিশর: বসবাসের জন্য খুব বেশি উপযোগী আবার যে খুব বেশি অনুপযোগি তা কিন্তু নয়। তবে প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত এ শহরে বায়ু দূষণ, বেপরোয়া ড্রাইভিং, অসহনীয় জানযট, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে।
৮. নয়াদিল্লি, ভারত: হকারদের বিড়ম্বনা আর ভ্রমণ জটিলতা প্রধান সমস্যা এখানে। সব জায়গা যেমন-এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন, হোটেল ইত্যাদি সব যায়গায় সদা সতর্ক থাকতে হয় প্রতারণা থেকে বাঁচার চেষ্টায়।
৭. জার্কাতা, ইন্দোনেশিয়া: ব্যাপক যানবাহন, জনসংখ্যার আধিক্য, দারিদ্র এবং বড় বড় ভবনের অাধিক্যের কারণে সিএনএন টিভি দর্শকদের ভোটে শহরটি নিকৃষ্টতম শহরের তালিকায় উঠে এসেছে।
৬. লিমা, পেরু: ল্যাটিন আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম শহরটি মেক্সিকো সিটির চেয়ে কিছুটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এছাড়া সাও-পাওলো থেকে কিছুটা নিরাপদ এবং সৈকতসমৃদ্ধ দেশ লা-পাজ থেকে উন্নত।
৫. লস অ্যাঞ্জেল্স, যুক্তরাষ্ট্র: ৯০টা উপ-শহর, পীড়াদায়ক ২০টি উন্মুক্ত সড়ক, অসংখ্য অগণন এরিয়া কোড এবং সাধারণ মানের থাই খাবারের দোকানসমেত রাস্তার পাশের পাঁচ লক্ষাধিক মলে ঠাসা এই শহর আসলেই বিরক্তিকর। পানি সরবরাহের সুব্যবস্থা ছাড়া মরুভূমিময় এই শহর কিভাবে এত বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে গড়ে উঠলো এটা এক বিস্ময়। আর একই কারণে এটি ব্যাপক অপছন্দনীয়ও। লস অ্যাঞ্জেল্সকে মজা করে কেউ কেউ উদ্ধৃত করেন ‘লট্স অ্যাংগ্রি’ বলেও।
৪. টিম্বাকটু, মালি: প্রায় এক শতাব্দী আগে বেপরোয়া নাছোরবান্দা পর্যটকরা কঠিন রাস্তা পাড়ি দিয়ে এই শহরটিতে আসতে পারার ‘দুর্লভ কৃতিত্ব’ উপভোগ করতেন। তবে প্রাচীন সাহারা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র টিম্বাকটু তার রূপ-যৌবন সব হারিয়েছে। বলা যায় সাহারার নিষ্ঠুর শুষ্ক বালির তলায় স্বর্ণযুগের টিম্বাকটু যেন হারিয়ে গেছে লক্ষ বছরের প্রাচীনতায়। আধুনিক মানুষের বসবাসের জন্য এর সেরকম কোনো উন্নতিই হয়নি।
৩. প্যারিস, ফ্রান্স: সিএনএন দর্শক ভোটে বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে আইফেল টাওয়ার আর মাদাম তুসোর যাদুঘর সমৃদ্ধ এবং আধুনিক শিল্প-সংস্কৃতির সমঝদারদের তীর্থ এই শহরের নাম। এই শহরে অবতরণের দশ মিনিটের মধ্যে প্রেম-ঘৃণার এক দ্বৈরথে আপনি তাড়িত হবেন-- রেস্তোরাঁয় একঘেয়ে রসকসহীণ ওয়েটার, ল্যুভর মিউজিয়ামের সামনে ক্ষ্যাপাটে মানুষের দীর্ঘ লাইন, আর শহরবাসীর ধূমপানাসক্তির বাতাবরণে।
২. সিডনি এবং মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া: এই দু’টি শহর এই তালিকার শীর্ষে আসতো না যদি না তাদের মাঝখানের বিদ্বেষের একটা অদৃশ্য দেওয়াল না থাকতো। সুদীর্ঘ ১৭৭ বছরের ধরে এই দুটি শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের পরষ্পরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে আসছে। ১৮৩৫ সালে মেলবোর্ন শহরের গোড়াপত্তনের পর থেকে সিডনি আর মেলবোর্নের বাসিন্দারা সবক্ষেত্রে পরষ্পর থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টায় এতটাই ব্যাকুল থেকেছে যে তা দেখে, কানাডার পরষ্পর বৈরী দুই শহর মন্ট্রিল আর টরন্টো লজ্জায় লাল হযে যাবে।
১, টিজুয়ানা, মেক্সিকো: মাদক চক্রের চিরকেলে হিংস্র আচরণ, অর্থনৈতিক মন্দা, সাম্প্রতিক সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব, গ্যাঞ্জামে পানশালায় পূর্ণ একটি ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত শহর টিজুয়ানা। ভূতুরে সীমান্ত পথগুলি এই শহরের ভাল-মন্দের অনেককিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে সম্প্রতি প্রকাশিত এক ওয়ার্ল্ডফোকাস রিপোর্টে দেখা যায়, গত ১০ বছরে এই শহরের বার্ষিক পর্যটক সমাগম নেমে গেছে শতকরা ৯০ ভাগ।
তবে যে যাই বলুক, ওই শহরগুলোতে যারা থাকেন, তারা নিশ্চয়ই নিজ নিজ শহরকে ভালোবাসেন মন দিয়ে। বলা যায়, নিজের শহর হচ্ছে নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার মত—জগৎ যতই মন্দ বলুক, নিজরে প্রিয় জিনিস প্রিই থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জনি সাহা/সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর