ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

চাঁদের গায়ে আর্মস্ট্রং

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৯, আগস্ট ২৬, ২০১২
চাঁদের গায়ে আর্মস্ট্রং

মহাকাশ জয়, সে তো অসম্ভব কল্পনা? যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে তখন এ নিয়ে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। এদিকে রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশযানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ফেলেছেন।

মার্কিনিদের মাথায় হাত! হুট করেই ঘোষণা, আমরাও চাঁদে মানুষ পাঠাবো।

দুদেশের বিজ্ঞানীরা করছেন বৈঠকের পর বৈঠক। চলছে অবিরাম গবেষণা। সব কাজে রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গোপনীয়তা। যুক্তরাষ্ট্র নভোচারী চেয়ে আবেদন জানালো। যোগ্যতা ও মানসিক দিক বিবেচনা করে তিনজন নির্বাচিত হলেন।

বিস্ময়করভাবে তিনজনের মধ্যে একজন সিভিলিয়ন সুযোগ পেয়ে গেলেন। সঙ্গে তাকে নেতাও নির্বাচিত কর‍া হলো। এ ব্যক্তিই হচ্ছেন নিল আর্মস্ট্রং। বাকি দুজনের নাম অ্যাডউইন ইউজিন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ এক অন্যরকম অর্জনের দিন। ১৯৬৯ সালে চাঁদের রহস্য অনুসন্ধানে উড়লো ‘অ্যাপোলো-১১’ নামের মহাকাশযান। বিশ্বের মানুষ স্বপ্নেও ভাবেনি এ দৃশ্যের কথা। চাঁদে মানুষ পৌঁছবে! চাঁদের মাটিতে মানুষের পা! এ তো রূপকথার গল্প।

অবশেষে চাঁদে পৌঁছলো মানুষ। দলনেতা হিসেবে চাঁদে অবতরণের বিষয় সম্পর্কে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিল আর্মস্ট্রং বলেন, আমাদের নভোযানটি চাঁদের মাটিতে নামবে তখন আমি প্রচন্ড ভয়ে ছিলাম। কারণ এর আগে কখনও নভোযান নামেনি। কি হবে আমরা কেউ জানি না। ভয় ছিল, শঙ্কা ছিল। তবে আমাদের রোমাঞ্চবোধে কোনো কমতি ছিল না।

চাঁদের ওপরে কিছুক্ষণ চক্কর খাওয়ার পর এবার চাঁদে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে স্বরণীয় ঘটনা ঘটার অপেক্ষা। নাটকীয় অভিযান শেষে নভোযানটি চাঁদে নামলো। এবার মানুষের পা স্পর্শ করবে চাঁদের মাটি। তবে প্রথমে পা পড়বার কথা ছিল অলড্রিনের। কিন্তু সিদ্ধান্তে হঠাৎ পরিবর্তন। আর্মস্ট্রং নামবেন চাঁদে। মানবসভ্যতার বিজয় পতাকা নিয়ে আর্মস্ট্রং লাফ দিয়ে নেমে পড়লেন।

এ বিষয়ে আর্মস্ট্রং বলেন, এটা একটা খুদে পদক্ষেপ। কিন্তু মানবসভ্যতার বির্বতনে সবচেয়ে বড় ও বিস্ময়কর ঘটনা।

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই রাত আটটা আঠারো মিনিটে আর্মস্ট্রং চাঁদ স্পর্শ করলেন। অবশ্য বাংলাদেশের সময়ের হিসাবে সেদিন ছিল ২১ জুলাই। আর্মস্ট্রং চাঁদে অবস্থান করেন মোট ২ ঘণ্টা ১৯ মিনিট।

বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিল আর্মস্ট্রং সে সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে বলেন, তখন আমি প্রচন্ড আবেগপ্রবণ ছিলাম। আমার দেশের পতাকা চাঁদে উড়াতে খুব গর্ব হচ্ছিল। যদিও শঙ্কা, ভয় সব অনুভূতির একটা মিশেল ছিল সে মুহূর্তে।

নিলের ভাষায় একটি খুদে পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে শত বছর। যার পদচিহ্ন চাঁদের বুকে পড়েছিল সেই নিল আর্মস্ট্রং শনিবার ২৫ আগস্ট ৮২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।

১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করা নিল মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বিমানে চড়েছিলেন। তখন থেকে আকাশের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ। ১৯৬২ সালে মার্কিন মহাকাশ কর্মসূচিতে যোগ দেন। তারপর তো তিনি ইতিহাসের স্বাক্ষী।

একটি খুদে পদক্ষেপ দিয়ে নিল আর্মস্ট্রং বিশ্বকে দেখিয়েছেন নতুন পথ। মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার স্বপ্নে তখন থেকেই নাসা বিভোর। তবে আর্মস্ট্রং অত্যন্ত সাধারণ চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। তিনি যখন দেখতে পেলেন চাঁদে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। এক সময় নাসার দায়িত্ব ছেড়ে থেকে চলে যান।

আর্মস্ট্রংকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, চাঁদে কি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এটি হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল কল্পনা। পৃথিবীর বহু মানুষ খাবার পায় না। সেখানে এ ব্যয়বহুল এবং বিলাসী ভ্রমণ সুখকর কিছু হবে না। তবে একদিন চাঁদে মানুষ ইচ্ছা করলেই ঘুরতে যেতে পারবেন। কারণ আমি নিজেও ভাবিনি মানুষ কখনও চাঁদে যেতে পারবো। আর চাঁদকে স্পর্শের ইতিহাসে আমিই হবো প্রথম ব্যক্তি!

সত্যিকার অর্থেই এ পদক্ষেপটি মানবসভ্যতাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। চাঁদের মতো অমিত রহস্যের হাতছানিকে সাড়া দিয়ে মানুষ পৃথিবীর হাজারো রহস্য উন্মোচনে উৎসাহ পেয়েছে। জয় হয়েছে মানুষের। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মহাকাশ জয় ঠিক তখনই যেনো হয়ে গেছে। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া। আর সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। মানবসভ্যতার জয় সর্বত্র।

বাংলাদেশ সময় ১৭৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।