ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়নি!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪২, আগস্ট ২৭, ২০১২
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়নি!

ময়মনসিংহ: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তখনও কবি হয়ে ওঠেননি। তখন তিনি দুখু মিয়া।

সেই সময়ে ত্রিশালে আগমন ঘটেছিল তার। সেই স্মৃতি ত্রিশালবাসী ভোলেননি।

সেই স্মরণ এতটা গভীর হয়েছিল যে, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে কবি নজরুল জয়ন্তী শুরু হয়।

সাধারণ ত্রিশালবাসীর সেই স্মরণ পরবর্তীতে ত্রিশালের নামাপাড়ায় কবিপ্রিয় সুকনী বিলের প্রান্তরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিকে গড়ায়। স্বভাবতই ওই সময় প্রত্যাশা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় হলে নজরুলকে ত্রিশালের মানুষ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন, গবেষণা এবং স্মরণ করতে পারবেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অবস্থা হয়েছে হিতে বিপরীত! ত্রিশালবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে, কবির নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে শুধুমাত্র জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্মরণের মধ্য দিয়ে সীমাবদ্ধ রেখেছে। নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী পালনের ব্যাপারে সব সময়ই তারা উদাসীন।

সোমবারও কবির মহাপ্রয়াণের বেদনাবিধূর স্মৃতিজড়ানো দিনে কবিকে স্মরণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। আয়োজন করেনি কোনো অনুষ্ঠান।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সকালে কবির মাজারে ফুল দিয়ে কবির প্রতিশ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপাচার্যের সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম।

১২ ভাদ্র সোমবার নজরুল মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান শূন্যতা প্রমাণ করে, ত্রিশালবাসীর স্মৃতি, স্মরণের ধারাবাহিকতাটুকু এ বিশ্ববিদ্যালয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে নজরুলপ্রেমীদের কাছে।

জানা গেছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ১১ জ্যেষ্ঠ ত্রিশালের দরিরামপুরে ৩ দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এ কারণেই অনেকটা বাধ্য হয়েই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানের বাইরে থাকে না। তারাও ওই ৩ দিন বেশ ঘটা করে পালন করে নজরুল জয়ন্তী। কিন্তু এরপর যেন নজরুলকে ভুলে যাওয়া!

জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৩ জুন মাত্র ৪টি বিভাগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছরেই তৎকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড.এম.শামসুর রহমানের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এরপর আর পালন হয়নি এ দিনটি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটও এ ব্যাপারে প্রচণ্ড উদাসীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নিজের অনুগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বরাবরের মতো এবারও সোমবার ঢাকায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছেন। এখানে তার সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকে।  

এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, “নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল চর্চা নামের একটি বাধ্যতামূলক কোর্স রয়েছে। এখানে বেশ ঘটা করেই জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। কিন্তু মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করার বিষয়টি সচেতন মহলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, “এমন দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে আমরা বন্ধুরা গান, কবিতার মাধ্যমে প্রিয় কবিকে স্মরণ করবো। ”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র আতিকুল বাশার ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “নজরুলের জন্ম জয়ন্তীর মতো নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী পালনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক করা দরকার। ”

‘দ্রোহকাল বিলাপ’ খ্যাত গল্পের লেখক ও ত্রিশালের তরুণ কবি জুয়েল মোর্শেদ বলেন, “বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে লক্ষ করেছি, গত কয়েকদিন ধরে নজরুল মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়েই কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি শূন্য। হায়রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন !”

উদাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো: বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও শিক্ষক সমিতির কমিটি রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে সরব থাকতে দেখা যায়। কিন্তু ১২ ভাদ্র নজরুল মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে সোমবার কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। অতীতেও নজরুল মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো কর্মসূচি পালন না করার নজির সৃষ্টি করেছে এ সংগঠনগুলো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, “পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি ছুটিতে আছি। তবে এবারও আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। ”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক জয় চক্রবর্তী বলেন, “আমরা সোমবার সকালে আলাদাভাবে কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। ”

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি। ”

এসব বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীরকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, “কবির মৃত্যুবার্ষিকী মাজারকেন্দ্রিক। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান না করে ঢাকায় কবির মাজারে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এছাড়া বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।