প্যারিসের তিয়াটর দু শাতলের রাতটি ছিল লিওনেল মেসির। রেকর্ড অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি'অর জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
মূলত মাঠের বাইরের ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যালন ডি'অরের মঞ্চেই ফরাসি ক্রীড়া সাময়িকী ফ্রঁস ফুতবোল সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড দেয়। গত দুই মৌসুম ধরেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ভিনি। পাশাপাশি নিজ দেশ ব্রাজিলের শিক্ষা খাতে অবদান রাখছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। এবার সেই কাজেরই স্বীকৃতি পেলেন তিনি। মোনাকোর যুবরাজের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে ভিনি বলেন, 'বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই চলবে। এখনকার যুগেও বর্ণবাদ থেকে কথা বলা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে, যাতে আক্রান্তদের দুর্দশা কমানো যায়। '
লা লিগায় প্রায়ই দর্শকসারি থেকে ভিনিকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী স্লোগান দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাকে একই ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় প্রায়ই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মায়োর্কার বিপক্ষে ম্যাচেও এমনই এক ঘটনা ঘটে। ম্যাচ শেষে স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান দাজন-এর সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে। সেখানে দেখা যায়, মায়োর্কার সমর্থকদের একটি অংশ ভিনিসিয়ুসকে ‘বানর’ বলে ডাকছে। শুধু একবার নয়, কয়েকবার তাদের মুখে এমন ধ্বনি উচ্চারণ হতে দেখা গেছে।
লা লিগায় এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও বেশ কয়েকবার বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। ২০২১ সালের নভেম্বরে বার্সেলোনার মাঠে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের আতলেতিকো মাদ্রিদের ওয়ান্ডা মেট্রোপোলিতানোতে এবং ডিসেম্বরের শেষদিকে রিয়াল ভায়াদলিদের মাঠে বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ভিনিসিয়ুস।
এর আগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও বর্ণবাদের শিকার হতে দেখা গেছে ভিনিসিয়ুসকে। দেখা গেছে ক্লাবটির ট্রেনিং সেন্টারের পাশে সেতু থেকে একটি ম্যানিকিন বা মানবাকৃতির পুতুল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, যেটির গায়ে ছিল ২০ নম্বর জার্সি। ভিনিসিউসের জার্সি নম্বরও ২০। পাশেই ছিল আতলেতিকো মাদ্রিদের লাল-সাদা একটি ব্যানার, যেখানে লেখা ছিল ‘রিয়ালকে ঘৃণা করে মাদ্রিদ'।
ভিনিসিয়ুসের এই বর্ণবাদের শিকার হওয়ার কারণে অবশ্য ফুটবলার ও সতীর্থরা তাকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। জাতীয় দলের সতীর্থসহ কোচ ও ক্লাবও পাশে রয়েছে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের। তবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নন ভিনি। ব্রাজিলের তার নামে একটি ইনস্টিটিউট কার্যক্রম শুরু করে ২০২০ সালে। এই ইনস্টিটিউট থেকে ভিনির তারকাখ্যাতি ব্যবহার করে ব্রাজিলের পাবলিক স্কুলগুলোতে বিভিন্ন সহায়তা করা হয়। জানা গেছে, ২০২৩ সালের মধ্যে এই প্রোজেক্টের কারণে ১৫টি স্কুলের ১০ হাজার শিক্ষার্থী উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ৫০০-এর বেশি শিক্ষকের কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা হবে।
ফুটবল মাঠেও গত মৌসুমে ভালো কেটেছে ভিনির। ২৩ বছর বয়সী এই তারকা এবারের ব্যালন ডি'অর র্যাংকিংয়ের সেরা দশে ছিলেন। গত মৌসুমে রিয়ালের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তিনি গোল করেছিলেন ২৩টি। পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি নিজের সাফল্যের জন্য কিংবদন্তি পেলেকে ধন্যবাদ জানান। গত বছরের ডিসেম্বরে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী পেলে। তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ভিনি বলেন, 'পেলে আমার জন্য ঈশ্বর এবং আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি তার জন্যই। ব্রাজিলকে অন্য লেভেলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার মহান সব কীর্তির কারণেই মানুষ এখনও ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের সম্মান জানায়। '
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
এমএইচএম