দেশের ফুটবলের খোলনলচে বদলে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস ফুটবল ক্লাব। আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল অবকাঠামো তৈরি করেই ক্ষান্ত দেয়নি কিংস ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই কিংসের জার্সিতে খেলেন। এর বাইরে তৃণমূল ফুটবলারদের দিকেও সমান নজর ক্লাবটির। দেশের আলোচিত তরুণ দুই ফুটবলার শেখ মোরসালিন এবং গোলরক্ষক মেহেদী শ্রাবণ কিংসের 'তৃণমূলের প্রোডাক্ট'। মোরসালিন, শ্রাবণদের মতো বেশ কয়েকজন তরুণ এরই মধ্যে ফুটবলে ডালপালা মেলতে শুরু করেছেন। তাদেরই একজন দেশের পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নের মিডফিল্ডার আকমল হোসেন নয়ন।
প্রথমবারের মতো ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্সের জার্সিতে খেলছেন যশোরের বেনাপোল থেকে উঠে আসা নয়ন। বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের প্রখ্যাত একাডেমি আলহাজ নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমি থেকে ঢাকায় পা রেখেছেন তিনি। তবে ঢাকার ফুটবলে থিতু হতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাকে। এক্ষেত্রে নয়নকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং নিয়মিত করে যাচ্ছেন যশোরের তৃণমূলের জনপ্রিয় কোচ, ফুটবল-চাষী নামে যিনি সমধিক পরিচিত সেই সাব্বির আহমেদ পলাশ। নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমির প্রধান কোচ পলাশ। আজকের নয়নকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলছেনই তিনি। পলাশকে নিজের ফুটবল অভিভাবক বলে পরিচয় দেন নয়ন। শুধু তা-ই নয়; বাবা-মায়ের পরে সাব্বির আহমেদ পলাশকেই নিজের সব কিছু মানেন।
ব্রাদার্সের জার্সিতে খেললেও নয়ন মূলত বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার। পাঁচ বছরের চুক্তিতে রয়েছেন ক্লাবটির সঙ্গে। চুক্তির মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত। আপাতত গোপীবাগের দলটিতে ধারে খেলছেন। তবে মাসিক বেতন কিংস ক্লাব কর্তৃপক্ষই দিচ্ছে। তাই কিংসের প্রতি কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই নয়নের।
বসুন্ধরা কিংস ক্লাব প্রসঙ্গে আকমল হোসেন নয়ন বলেন, ‘পলাশ স্যার না থাকলে যেমন ঢাকার ফুটবল কি সেটা জানতাম না! ঢাকায় আসতে পারতাম না। তেমনি বসুন্ধরা কিংস পাশে না থাকলে আমি নিজেকে ফুটবলার হিসেবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম না। এটা ঠিক যে, আমি এখনো কোনো প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার নই। তবে ব্রাদার্সের মতো বড় ক্লাবে খেলার সুযোগ পাওয়াটাও কম সৌভাগ্যের নয়। এজন্য আমি আমের খান স্যারকে ধন্যবাদ জানাব। আরো ধন্যবাদ জানাব কিংস ক্লাবের ম্যানেজার ওয়াসিম স্যার, কোচ অস্কার ব্রুজোন, নিপু স্যারসহ পুরো কোচিংস্টাফদের। সকলের সহযোগিতায় আমি আজকের নয়ন হতে পেরেছি। ’
এটা ঠিক যে নয়ন এখনো প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার হতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম গোল করে কিছুটা হলেও অবস্থান জানান দিতে পেরেছেন। ব্রাদার্সের জার্সিতে চলমান লিগে তিন ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তার। পরশু মোহামেডানের বিপক্ষে যে ৫-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে ব্রাদার্স, সেখানে এক গোল ছিল নয়নের। হারা ম্যাচে ব্রাদার্সের আনন্দের মুহূর্ত নয়নের ওই গোলটি। এমন আরো অসংখ্য গোল ঢাকার ফুটবলে উপহার দিতে চান যশোরের এ ফুটবলার। নিয়মিত মাঠে থাকতে চান। হতে চান দেশসেরা ফুটবলার, তারকা মিডফিল্ডার। পাশাপাশি জাতীয় দলের জার্সিটাও গায়ে জড়াতে চান তিনি। এর জন্য যত পরিশ্রম করতে হয় তার জয় প্রস্তুত নয়ন।
জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই দেখেছেন। একদিন ফুটবল পায়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াবেন এমনটা কেবল স্বপ্নেই ভেবেছেন। বাস্তবে এটা রূপ পাবে কখনো ভাবেননি। অভাবের সংসারে এমন ভাবনা যে পাপ। তবে পরিবার পাশে ছিল বিশেষ করে মায়ের চেষ্টাতেই আলহাজ্ব নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হতে পেরেছিলেন নয়ন। ওই একাডেমির কল্যাণে এবং একাডেমির প্রধান কোচ সাব্বির আহমেদ পলাশের শক্ত হাতটি নয়নের হাতে ছিল বলেই আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়াতে পেরেছেন। এখান থেকে আর নিচের দিকে যেতে চান না। কেবল সামনে এগিয়ে যেতে চান। বাবা-মা জীবনে অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বৃদ্ধ বাবা-মাকে একটু হলেও শান্তি দিতে চান নয়ন। দু’বেলা-দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা পরিবারের জন্য নিশ্চিত করতেই ফুটবলে আমৃত্যু সংগ্রামটা চালিয়ে যেতে চান ১৮ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডার নয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
এআর/এমএইচএম