আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। এবার তাদের দল অনেকটাই বদলে গেছে।
সেই যুগের শেষ প্রতীক, কিলিয়ান এমবাপ্পে, যখন গত গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান, তখনই পিএসজি খুঁজে পায় নতুন পথ—এবং সেই পথের স্থপতি লুইস এনরিকে।
নতুন যাত্রার নকশায় এনরিকে
তাকে ক্লাবের ভেতরে বলা হয় “ফুটবল স্থপতি”—যিনি পরিকল্পনা করেন, গড়েন, গড়ে তোলেন ভবিষ্যৎ।
এনরিকে বোঝাতে সক্ষম হন ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফি ও ফুটবল পরামর্শক লুই কাম্পোসকে যে, তরুণ ও সংহত একটি দলই পিএসজিকে ভবিষ্যতে সাফল্য এনে দিতে পারে।
তার হাতে গড়া সেই নবীন দলই এখন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে, যেখানে তাদের সামনে একমাত্র বাধা অভিজ্ঞ ইন্টার মিলান।
মাঠে নিবেদন, মাঠের বাইরে দার্শনিকতা
প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে হাঁটেন পিএসজির ট্রেনিং মাঠে—এনরিকে বিশ্বাস করেন প্রকৃতির সঙ্গে এই সংযোগ শরীর ও মনকে ভারসাম্য দেয়।
এই শৃঙ্খলা শুধু তার ব্যক্তিজীবনেই নয়, ফুটবলেও প্রতিফলিত হয়।
"আমি যদি কোচ হই, তবে পুরো নিয়ন্ত্রণ আমার চাই"
—এনরিকের এই স্পষ্ট বার্তা পিএসজিকে দিয়েছে নতুন নেতৃত্ব।
পূর্বতন কোচদের যেখানে সুপারস্টারদের মুখ চেয়ে চলতে হতো, এনরিকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিয়মানুবর্তিতা ও সাম্যবাদ। তিনি কাউকে ছাড় দেন না—ওসমান দেম্বেলেকে এক ম্যাচে পরিশ্রম না করায় বাদও দিয়েছেন। তবে দেম্বেলে ফিরে এসে হন দলের অন্যতম নায়ক।
ফুটবলের বাইরেও এক যন্ত্রণাময় জীবন
২০১৯ সালে বিরল হাড়ের ক্যানসারে কন্যা জানাকে হারান এনরিকে। তবুও তিনি বলেন,
"শুধু শরীরটা নেই। সে এখনো আমাদের সঙ্গে থাকে। আমরা প্রতিদিন ওকে নিয়ে কথা বলি, হাসি, স্মরণ করি। "
এই অভিজ্ঞতা তাকে করেছে সংবেদনশীল, নির্ভীক—এমন একজন মানুষ যিনি বলেন, "আমাকে বরখাস্ত করলেও পরদিন সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। "
তারকা ছেঁটে তুলে এনেছেন তরুণদের
এমবাপ্পের বিদায়ের পর এনরিকে পেয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা। তারকার পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছেন যুবশক্তিকে।
ডেসিরে দোয়ে, ব্রাডলি বারকোলা, ওসমান দেম্বেলে, এবং জানুয়ারিতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোয় যোগ দেওয়া জর্জিয়ান বিস্ময় খিচা কাভারাস্কেইয়া—এদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন গতিময়, প্রাণবন্ত এক স্কোয়াড।
প্রাক্তন স্কটিশ উইঙ্গার প্যাট নেভিন বলেন,
"খিচা কাভারাস্কেইয়ার এমন সব বৈশিষ্ট্য আছে যা একজন উইঙ্গারের মধ্যে চাওয়া হয়—সাহস, কৌশল, ও সাহসিকতা। তাকে আটকাতে দু’জন লাগে, আর সেখানেই অন্যদের জন্য জায়গা তৈরি হয়। "
এই তরুণদের গড় বয়স মাত্র ২৪ বছর ২৬২ দিন—চলতি আসরে এটি সবচেয়ে কম।
তাদের হাই প্রেসিং স্টাইল ইউরোপের বড় বড় দলকে বেকায়দায় ফেলেছে, যার প্রমাণ—এই আসরে সর্বোচ্চ ৩৭টি ‘হাই টার্নওভার’-এর মাধ্যমে শটের সুযোগ।
ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, অ্যাস্টন ভিলা, আর্সেনাল—সবাই তাদের আক্রমণের বুলডোজারে চূর্ণ।
গ্যালারিতে অপেক্ষা করছে এক অগ্নিঝরা রাত
পিএসজির ‘আলট্রা’ সমর্থকেরা এবার সরাসরি গ্যালারিতে থাকবেন—কোভিড-আক্রান্ত ২০২০ ফাইনালের মতো নয়। মিউনিখে তারা নিয়ে এসেছেন সেই উত্তাল আবহ।
টিফোতে লেখা ছিল: "ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত, তবুও প্যারিস কখনো ডোবেনি"। এই বার্তাই যেন এখন পিএসজির আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
গত ১০ বছরে একবার ফাইনাল, দুইবার সেমিফাইনাল, বাকি সময়ে হতাশা। এবার যেন লুইস এনরিকে সেই ইতিহাস বদলে দেওয়ার এক বাস্তব স্বপ্ন। তার গড়া তরুণ, সংগঠিত ও নিবেদিত এক পিএসজি কি পারবে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব ছুঁতে? প্যারিস যেন অপেক্ষা করছে এক বিজয়ের ভোরের।
এমএইচএম