"আমি জানতাম আমি ব্যথা পাচ্ছি, কিন্তু বলেছিলাম—ব্যান্ডেজ বেঁধে যুদ্ধেই নামবো। "
মাত্র ছয়দিন আগেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন—তিন-চার সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকবেন তিনি।
এই হলেন ইন্টার মিলানের 'ক্যাপ্টেন কারেজ'—লাউতারো।
তার ভাষায়,
“আমি ফিট ছিলাম না। বাসায় কাঁদছিলাম। মা বলছিলেন যেন খেলি না। কিন্তু আমি জানতাম, এটা আমার যুদ্ধ। ”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নয়, যেন ব্যক্তিগত লড়াই
আর্জেন্টিনার বাহিয়া ব্লাঙ্কা শহরের এক ফুটবল-পাগল পরিবারে জন্ম লাউতারোর। বাবা ছিলেন ফুটবলার, দাদাও তাই। এমনকি দাদিমা লুইসা ছিলেন শহরের প্রথম নারী ফুটবলার। ছোট ভাই এখন পেশাদার বাস্কেটবল খেলেন।
ছোটবেলায় খেলতেন ডিফেন্ডার পজিশনে। বলেছিলেন,
“ক্রসবারে গিয়ে পড়ে যেতাম, দারুণ লাগতো!”
১২ বছর বয়সে যখন বোকা জুনিয়র্সের ট্রায়ালে যান, ফিরিয়ে দেওয়া হয় এই বলে—“গতি নেই, শক্তি নেই। ” আজ সেই কথাগুলোই বোকা কর্তাদের কানে যেন ব্যঙ্গ হয়ে বাজে।
ইন্টারের 'এল তোরো'
২০১৮ সালে ২৫ মিলিয়ন ইউরোয় রেসিং ক্লাব থেকে ইন্টারে যোগ দেন লাউতারো। এরপর ছয় বছরে হয়ে উঠেছেন ক্লাবটির প্রতীক। ইতিমধ্যে করেছেন ৩৩০ ম্যাচে ১৫১ গোল—ইন্টারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করা বিদেশি তিনি। ছুঁয়েছেন ক্রেসপোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মৌসুমে গোলের রেকর্ড (৯ গোল)। পেছনে ফেলেছেন সান্দ্রো মাজোলাকে—ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইন্টারের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে।
এত অর্জন নিয়ে তার মন্তব্য,
“আমি যখন এলাম, ভাবিনি এত অর্জন পাব। এখন মাঠে ১১০ শতাংশ দিয়ে ক্লাবের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই। ”
জাতীয় দলের হয়ে তিনি জিতেছেন সব—বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা (দুবার), ফিনালিসিমা। ক্লাব পর্যায়ে জিতেছেন লিগ, কাপ, সুপার কাপ মিলিয়ে সাতটি শিরোপা। কিন্তু এখনো অধরা ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব।
লাউতারো বলেন,
“বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতাম, সেটা পেয়েছি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ? ওটাই এখনো বাকি। ”
ব্যালন ডি’অর? সেটাও তো অসম্ভব নয়!
এবার যদি ইন্টার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে, তাহলে ব্যালন ডি’অরের তালিকায় উঠতেই পারে তার নাম। যদিও তিনি নিজেই বলছেন—“ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবি না। ক্লাবের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা, যেটা আমরা ১৫ বছর ধরে পাইনি। ”
সব হারিয়ে আবার ফিরে আসার নাম লাউতারো
একটা ক্লাব যখন তার দরকারে সাড়া দেয়, একজন খেলোয়াড় তখন নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। বোকা জুনিয়র্স তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, ইন্টার মিলান তাকে আপন করে নিয়েছে। আর লাউতারো—এই যোদ্ধা, এই ‘এল তোরো’—নিজেকে প্রমাণ করেছেন নতুন করে, আবারও।
এখন অপেক্ষা শুধু ফাইনালের। হয়তো এখানেই শেষ হবে তার ‘পার্সোনাল গ্র্যান্ড স্লাম’-এর স্বপ্ন, আর শুরু হবে ব্যালন ডি’অরের পথচলা।
এমএইচএম