ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৫ জুন ২০২৫, ০৮ জিলহজ ১৪৪৬

ফুটবল

ফুটবলে কাতারের সফট পাওয়ারের বিজয় ঘোষণা প্যারিস থেকে

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৯, জুন ৩, ২০২৫
ফুটবলে কাতারের সফট পাওয়ারের বিজয় ঘোষণা প্যারিস থেকে সংগৃহীত ছবি

দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষা, ২.২ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিশাল বিনিয়োগ, একের পর এক বিশ্বসেরা তারকা, আর বহু হতাশার পর অবশেষে ইউরোপ সিংহাসনে বসলো প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। কাতারের মালিকানাধীন ফরাসি ক্লাবটি প্রথমবারের মতো জিতেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ।

২০১১ সালে কাতারের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস (কিউএসআই) মাত্র ৬৯ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে পিএসজির ৭০ শতাংশ মালিকানা কেনে। তখন থেকেই শুরু কাতারের ‘সফট পাওয়ার’ নির্মাণের অভিযান — যার মুকুট আজ পিএসজির হাতে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি।

তারকায় তারকায় ভরা ১৪ বছরের অভিযান

এই যাত্রায় পিএসজিতে এসেছেন বিশ্ব ফুটবলের সেরা নামগুলো: পাস্তোরে, ইব্রাহিমোভিচ, থিয়াগো সিলভা, কাভানি, দি মারিয়া, নেইমার, এমবাপ্পে, সের্হিও রামোস ও লিওনেল মেসির মতো তারকা ফুটবলাররা।

কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কার্লো আনচেলত্তি, উনাই এমেরি, টমাস টুখেল, এবং বর্তমানে লুইস এনরিকে।

২০১৭ সালে নেইমারকে আনতে খরচ হয়েছিল রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো। এরপর ২০১৮ সালে এমবাপ্পেকে নেওয়া হয় ১৮০ মিলিয়নে। মেসি আসার সময় ২০২১ সালে ক্লাবের বার্ষিক বেতন বিল দাঁড়িয়েছিল ৭২৮ মিলিয়ন ইউরো — ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

নতুন ইতিহাস, অর্থনীতির বিস্ফোরণ

২০১১ সালে পিএসজি ছিল না ইউরোপের শীর্ষ ৩০ ধনী ক্লাবের তালিকায়। অথচ ২০২৫ সালে ক্লাবটির আয় দাঁড়িয়েছে ৮০৬ মিলিয়ন ইউরো, ইউরোপে তৃতীয় সর্বোচ্চ (শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ, আয় ১ বিলিয়নের বেশি)।

ফ্রান্সের ঘরোয়া ফুটবলে পিএসজির আধিপত্য এখন অবিসংবাদিত। তারদের ঝুলিতে আছে ১৩টি লিগ ওয়ান শিরোপা (এর মধ্যে ১১টি কাতারি মালিকের আমলে), ১৬টি ফরাসি কাপ, ৯টি লিগ কাপ ও ১৩টি সুপার কাপ।

চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষমেশ সাফল্য

এই যাত্রায় পিএসজির ভাগ্যে ছিল বহু ব্যর্থতা: ২০২০ সালের ফাইনালে হারে, ২০২১ ও ২০২৪-এ সেমিফাইনাল, চারবার কোয়ার্টার ফাইনাল, পাঁচবার শেষ ষোলো থেকে বিদায়।

তবু ২০২৫ সালের এই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় দিয়ে সেই ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে কাতারের পিএসজি।

সফট পাওয়ার কূটনীতি ও কাতারের অর্জন

কাতারের এই বিনিয়োগ কেবল ফুটবল নয়, বরং কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। বিশেষজ্ঞ রাফায়েল লে ম্যাগোয়ারিয়েক বলেন, "পিএসজি কাতারের সফট পাওয়ার কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলাকে ব্যবহার করাই তাদের লক্ষ্য ছিল — এবং তা তারা সফলভাবেই করেছে। "

এসকেইএমএ বিজনেস স্কুলের ক্রীড়া ও ভূরাজনীতির অধ্যাপক সাইমন চ্যাডউইক বলেন, “অনেক ইউরোপীয় ভক্তদের চোখে পিএসজি কাতারি অর্থনীতির প্রতীক — যেখানে কেবল টাকার জোরে সাফল্য কেনা হয়। ঐতিহ্য ও ইতিহাস সেখানে গুরুত্ব পায় না। ”

পিএসজির প্রেসিডেন্ট ও কিউএসআই প্রধান নাসের আল খেলাইফি, যিনি উয়েফা নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি, তিনি বলেন: “আমার লক্ষ্য ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা। আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা। এই সাফল্য ক্লাবের প্রতি সকলের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, দলগত চেতনা এবং পেশাদার প্রতিশ্রুতির ফসল। ”

পিএসজি এখন ইউরোপে সবচেয়ে দামি ক্লাবগুলোর একটি — মূল্য: ৪.২ বিলিয়ন ইউরো

২০২৩ সালে মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান 'আর্কটস পার্টনার্স' ক্লাবের ১২.৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছে ৫৩১ মিলিয়ন ইউরোতে (কিন্তু ফুটবলে কোনো হস্তক্ষেপ নেই)

ক্লাবটি ২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে ৩ বিলিয়ন ইউরো (কিউএসআই-এর এক গবেষণা অনুযায়ী)

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।