'জীবনে যখন বয়স বাড়ে, তখন অনেক কিছুই হারিয়ে যায়'— হলিউডের বিখ্যাত 'অ্যানি গিভেন সানডে' ছবিতে টনি ডি'আমাতো (আমেরিকার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব মায়ামি শার্কসের সাবেক প্রধান কোচ) চরিত্রে আল পাচিনোর সেই বিখ্যাত বক্তব্যটা যেন আজকের লুইস সুয়ারেসের বাস্তব চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একসময়কার দুর্দমনীয় এই উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড এখন ৩৮ বছর বয়সী।
ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইন্টার মায়ামির শেষ ম্যাচে পালমেইরাসের বিপক্ষে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত সুয়ারেস ছিলেন গোলশূন্য। অন্যদিকে, দলের কয়েকজন তুলনামূলক অপরিচিত মুখ নজর কাড়েন। গোলরক্ষক অস্কার উস্তারি আল আহলি ম্যাচে চোখধাঁধানো সেভে দলকে টিকিয়ে রাখেন। এরপর তেলাস্কো সেগোভিয়া পোর্তোর বিপক্ষে দুর্দান্ত গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা করেন—যেটা শেষ করেন লিওনেল মেসি নিখুঁত এক ফ্রি কিকে।
সুয়ারেস তখনও দলকে কিছু দেওয়ার মতো মুহূর্ত তৈরি করতে পারেননি। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে—আর কতদিন বহন করবে ইন্টার মায়ামি তাকে? কোচ হাভিয়ের মাচেরানো তো আল আহলি ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, “দুই মাস ধরেই বলছি, আমাদের দলকে শক্তিশালী করা দরকার। এই প্রতিযোগিতা শেষ হলে সবাইকে দায় নিতে হবে। ”
তবে দলটাকে যে ‘শক্তিশালী’ করা কঠিন, সেটাও বাস্তবতা। কারণ, মেসিকে ঘিরে গড়া স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা—সুয়ারেস, সের্হিও বুসকেতস, জর্দি আলবা। তাদের পারফরম্যান্স নয়, মূল উদ্দেশ্য মেসিকে খুশি রাখা। কিন্তু তার খেসারত দিতে হচ্ছে বেতনসীমার বাঁধনে, যা নতুন রিক্রুটমেন্টে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে পালমেইরাসের বিপক্ষে ম্যাচে যেন সময়কে একবারের জন্য হলেও পিছিয়ে দেন সুয়ারেস। প্রথমার্ধে এক ঝটকায় চেস্টে বল নামিয়ে তাদেও আলেন্দেকে এগিয়ে দেন গোলের পথে—যার সহজ ফিনিশে এগিয়ে যায় ইন্টার মায়ামি। এতটাই অসচেতন ছিল পালমেইরাসের ডিফেন্স, যে সেন্টার-ব্যাক মুরিলো ছুটে গিয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন।
দ্বিতীয়ার্ধেও সুয়ারেস একাধিকবার চোখ ধাঁধানো পাস দেন। নিজের গতি না থাকলেও তিনি ‘গেম রিডিং’ দিয়ে ঠিকই খেলা চালিয়ে যান। এক থ্রো-ইন থেকে বুদ্ধিদীপ্ত ওয়ান-টাচ পাসে আবারও আলেন্দেকে সুযোগ করে দেন, যদিও এবার গোল হয়নি।
শেষ দিকে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। দৌড়, ধাক্কাধাক্কি, বলের সঙ্গে দেহের চমৎকার সমন্বয়—শেষ পর্যন্ত গোল! এটি হয়তো একটি ‘ঝাঁপসা’ গোল ছিল, কিন্তু তাতে ছিল শত শত ফিনিশের অভিজ্ঞতা, ‘মাসল মেমোরি’র ঝলক।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র হয়। পালমেইরাস ফিরে এসে ম্যাচ বের করে নেয় এবং গ্রুপজয়ী হয়ে উঠে যায় পরের রাউন্ডে। তাদের গভীর স্কোয়াড আর তরুণদের গতি হয়ে দাঁড়ায় পার্থক্য। বিশেষ করে এন্দ্রিক, ভিতোর রেইস, এবং চেলসিতে পাড়ি জমাতে যাওয়া এস্তেভাও-এর মতো প্রতিভাবানদের কল্যাণে।
অন্যদিকে, ইন্টার মায়ামিকে এখন খেলতে হবে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী পিএসজির বিপক্ষে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে তাদের পুরনো কোচ লুইস এনরিকে। যার অধীনে একসময় বার্সেলোনায় খেলেছেন মেসি ও সুয়ারেস। ফলে মেসি-সুয়ারেস বনাম পিএসজি—এটা এক কঠিন লড়াই, যেখানে বয়স বনাম গতি, স্মৃতি বনাম বাস্তবতা মুখোমুখি হবে।
সুয়ারেস হয়তো পালমেইরাসের বিপক্ষে এক ম্যাচের জন্য সময়কে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু পিএসজিকে হারাতে হলে, তার লাগবে একটা 'টাইম মেশিন'।
এমএইচএম