ঢাকা: লড়াইটা এতদিন ছিল পেলে বনাম ম্যারাডোনার মধ্যে। কে সর্বকালের সেরা ফুটবলার এ নিয়ে তর্কের অবসান এখনও হয়নি।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এখন নেইমার-মেসিতে এসে ঠেকেছে। পেলে-ম্যারাডোনার পর এই একটা যুতসই প্রতিপক্ষ পাওয়া গেল।
দুই তারকা দুই দলের হয়ে বিজয়রথ ছুটিয়ে চলেছেন। ব্যক্তিগত প্রাপ্তিটাও কম না। ফুটবলদেবতা চলতি বিশ্বকাপে যেন দুজনকেই দু’হাত ভরে দিচ্ছেন।
ঝটপট পরিসংখ্যানের হিসাবটা সেরে নেওয়া যাক। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচে নেইমার ও মেসি দুজনেরই গোল সংখ্যা ৪। দুই দলই বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব শেষ করেছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২ গোল করে নেইমারের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু। পরের ম্যাচ মেক্সিকোর বিপক্ষে অলৌকিকভাবে গোল না পেলেও তৃতীয় ম্যাচ ক্যামেরুনের বিপক্ষে পান আবারও জোড়া গোল।
এদিকে মেসির শুরু বসনিয়া-হারজেগভনিয়ার বিপক্ষে ১ গোল দিয়ে। ইরানের বিপক্ষে শেষ সময়ে তার অসাধারণ গোলে ১-০ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। বুধবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পেয়েছেন ২ গোল। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে ম্যাচ জেতে।
এ যেন অঘোষিত এক ব্যক্তিগত নৈপূণ্য প্রদর্শনের লড়াই। এক ম্যাচে নেইমার গোল করে দেখিয়ে দিচ্ছে তো অন্য ম্যাচে মেসি। কেউ দু-তিন জনকে কাটিয়ে একক প্রচেষ্টায় গোল করছে তো, পরের ম্যাচেই অন্যজন দেখিয়ে দিচ্ছে তার বাঁ পায়ের ভেলকি।
যদিও তারা বার্সেলোনার সতীর্থ, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে ঝাপিয়ে পড়েন। কিন্তু বিশ্বকাপে তারা সবচেয়ে বড় দুই প্রতিপক্ষ। এখন পর্যন্ত সমান ৪ গোল নিয়ে গোল্ডেন বুটের লড়াই লড়ছেন।
২২ বছর বয়সী নেইমার এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৫২ ম্যাচে ৩৫ গোল করে ফেলেছেন। বিশ্বকাপে মেসি যেন প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন, ‘দেশের হয়ে খেলতে পারে না’ অপবাদ ঘুচিয়ে দেবেন। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি গায়ে সেই প্রতিজ্ঞা রেখেও চলেছেন।
যত ম্যাচ গড়াচ্ছে ফুটবল বিশ্লেষকদের মত, মেসি যেন তার ঝোলা থেকে বের করছেন নতুন নতুন অস্ত্র। মেসির পারফরমেন্সই যেন নেইমারের জন্য বার্তা, ‘তুমি যেখানে শেষ করবে, আমি তার দুই ধাপ পর থেকে শুরু করব’। অথবা, ‘তুমি যাই কর না কেন, আমি তার থেকে আরও ভাল করে দেখাব’। এবার নেইমারের উত্তর দেওয়ার পালা।
দ্বিতীয় পর্বে ব্রাজিল চিলির বিপক্ষে ও আর্জেন্টিনা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে। গোটা বিশ্বের ফুটবল পিপাসুরাসহ তাদের নিজ নিজ দেশ তাকিয়ে আছে নেইমার-মেসির পায়ের দিকে।
ফুটবল দুনিয়ায় তারা দুজন এমন দুই দেশের হয়ে খেলেন, যেখানে বিশ্বকাপ জেতা ছাড়া আর কোন কিছুর স্থান নেই। সে তুমি যেই হও আর যাই কর না কেন! সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন সব প্রতিপক্ষ। দেখাযাক তাদের চার পা কোথায় গিয়ে থামে!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪