ঢাকা: দ্য ফেনোমেনন হিসেবে খ্যাত ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা রোনালদো বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলদাতাদের একজন। যিনি ব্রাজিলকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ।
একে এম মুজিব অপুর্ব নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক হিসেবেই তিনি পরিচিত। গত বুধবার আর্জেন্টিনার খেলায় মেসি ২ গোল করার পর তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের হিংসা করি কারণ তাদের মেসি আছে। ’
তিনি লিখেছেন, ‘দেবব্রত দাদাকে(সহকর্মী) মাঝে মধ্যেই মজা করে বলি, ‘মেসি হু!’ কিন্তু আমারও জানা, মেসি হলেন সেই জন, যাকে নেইমার নিজের আদর্শ মানেন।
নেইমার সম্পর্কে এ সমর্থকের অভিমত, ‘ নেইমারও হয়তো বিশ্বকাপ জিততে পারবে, তবে, সর্বকালের সেরা হতে পারবে না। টানা চারটা ব্যালন ডি’অর পাবে না। ওর ছেলেটা একটু কথা বলা শিখলে হয়তো বলবে, ‘তুমি বিশ্বকাপ জিততে পারো, কিন্তু তুমি মেসির মত না!’
এই হচ্ছেন মেসি, লিওনেল মেসি। ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চির এ ছোট্ট জাদুকর ছাড়িয়ে গেছেন ফুটবল জগতের সমস্ত উচ্চতাকে। জিতে নিয়েছেন একজন ফুটবলারের জীবনে জয় করা সম্ভব সবকিছুই।
চার চারচার জিতেছেন ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়ারের স্বীকৃতি। নিজের দেশ আর্জেন্টিনার অধিনায়কত্বের পাশাপাশি তিনি তার ক্লাব বার্সেলোনাকে জিতিয়েছেন সম্ভব সমস্ত শিরোপা।
তাইতো ফুটবলের অনেক রথী মহারথী তার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, ‘মেসি ভিনগ্রহের খেলোয়াড়। কারণ পৃথিবীর কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে এভাবে খেলা সম্ভব নয়। ’
সর্বকালের সেরা ফটুবলারদের একজন, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জীবন্ত কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনাও মেসি সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেসি আমার থেকেও ভালো!’
‘ফুটবল ঈশ্বর’ খ্যাত ম্যারাডোনার বলা এ কথাটি যে কেবল তুষ্টিবাক্য নয়, তা প্রতিটি ম্যাচেই প্রমাণ করে চলেছেন মেসি।
কি জাতীয় দলে কি, কি ক্লাবের হয়ে তিনি যখন খেলতে নামেন তখন সারাবিশ্বের শতকোটি ফুটবল ভক্তের চোখ আটকায় টেলিভিশন পর্দায়। কখন জাদুকর তার ‘জাদুর বাক্স’ খুলবেন আর মন্ত্রমুগ্ধ করবেন অগনতি দর্শককে।
সমালোচকরা বলেন, বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসি যতটা উজ্জ্বল আর্জেন্টিনার আকাশি নীলে ততটা নয়। কিন্তু সমালোচকদের কথার জবাব দিতে বোধ হয় তিনি বেছে নিয়েছেন ২০১৪’র ব্রাজিল বিশ্বকাপকেই।
এ বিশ্বকাপে মেসি শুধু উজ্জ্বলই নন, রীতিমত জ্বলন্ত। এরইমধ্যে গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচে তার গোলের সংখ্যা ৪টি হয়ে গেছে। নান্দনিকতার দিক থেকে যার একটি ছাড়িয়ে গেছে আগেরটিকে। গোল্ডেন বুটের দৌড়েও এগিয়ে রয়েছেন সবার থেকে।
সমর্থকেরা মেসির করা এ গোলগুলোকে ‘গোল’ না বলে ‘মেসি ম্যাজিক’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কারণ জাদু ছাড়া কি করে এভাবে বল জালে পাঠানো সম্ভব!
ফুটবলবোদ্ধারা মনে করেন মেসি তার ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ সময়ে রয়েছেন। কারণ তার মত বয়সেই ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল।
তাইতো এবারের বিশ্বকাপে এ ছোট্ট জাদুকরকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন। সারা বিশ্বের কোটি সমর্থক তাকিয়ে আছেন এক জোড়া জাদুর পা’র দিকে।
এবার বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে এ ক্ষুদে জাদুকর কতটা আত্মবিশ্বাসী শুনুন তার মুখেই ‘বিশ্বকাপ যেতা একটা বড় ব্যাপার। দারুণ স্পেশাল। আমিও স্বপ্ন দেখি রিওতে ফাইনাল খেলছি। আশা করি ফাইনালের পর কাপ স্পর্শ করতে পারবো। ’
এতদিনে ব্রাজিল বিশ্বকাপ যতদুর এগিয়েছে, জাদুকর হতাশ করেননি সমর্থকদের। প্রতিটি ম্যাচের পারফরমেন্সেই তিনি ছাড়িয়ে যাচ্ছেন পূর্ববর্তী ম্যাচের খেলাকে। তাইতো ফুটবলবোদ্ধারা বলছেন এখন সময় মেসির, এখন সময় আর্জেন্টিনার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪