ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

রোমেরোর দৃঢ়তায় ফাইনালে আর্জেন্টিনা

ওয়ার্ল্ড কাপ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৪
রোমেরোর দৃঢ়তায় ফাইনালে আর্জেন্টিনা ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে বিশ্বকাপের কাঙ্ক্ষিত ফাইনালের দেখা পেলো আর্জেন্টিনা। দুই যুগ পর গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর দক্ষতায় হল্যান্ডকে রুখে দিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছালো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

গোলশূন্য সেমিফাইনাল ম্যাচে পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে জয় পায় সাবেয়ার শিষ্যরা।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল নিজ মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছাতে না পারলেও মারাকানায় জার্মানির বিপক্ষে ঠিক পৌঁছে গেলো আর্জেন্টিনা। অপরদিকে তিনবার ফাইনালে যেয়েও শিরোপা না পাওয়া ডাচরা আবারও কাছাকাছি এসেও ফিরে গেলো শূন্য হাতে। হয়তো তাদের জন্য সামান্য সান্ত্বনা হতে পারে ব্রাজিলের বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি।


টাইব্রেকারে প্রথমে হল্যান্ডে পক্ষে শট নেন রন ভ্লার, তার শট রুখে দিয়ে গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দেয়। এরপর লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শটে গোল করে দলকে ১-০তে এগিয়ে নিতে কোনো ভুল করেননি।

হল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় শটে গোল করে আরিয়েন রোবেন দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এরপর শট নিতে এসে দারুণ দক্ষতায় গোল করেন এজিকুয়েল গ্যারে দলের লিড ২-১ করেন।

এরপর আবারও আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান রোমেরো। ওয়েস্লি স্নেইডারের শট রুখে দিয়ে দলকে নিশ্চিত জয়ের সুভাস দেন। আর রোমেরোর কীর্তিকে নষ্ট করেননি তৃতীয় শট নিতে আসা সার্জিও অ্যাগুয়েরো। তিনি গোলে করে দলকে ৩-১ এগিয়ে নেন।

এরপর ডাচ স্ট্রাইকার ডির্ক কায়ুট গোল করে ৩-২ এ ব্যবধান কমান। অপরদিকে চতুর্থ শটে গোল করে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের আনন্দের জোয়াড়ে ভাসান ম্যাক্সি রদ্রিগেজ।

ম্যাচের ধারাবাহিক বর্ণনা:
অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচের ৯৬ মিনিটে বল নিয়ে আর্জেন্টিনার ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে বল বাড়ানোর চেষ্টা করেন রোবেন। কিন্তু জাবালেতা কর্নারের বিনিময়ে সেটি প্রতিহত করেন।

খেলার ৯৯ মিনিটে ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ে জোরালো শট করেন আরিয়েন রোবেন। কিন্তু সতর্ক থাকা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলটি দখলে নেন।

 ম্যাচের খেলার গতি বাড়াতে ম্যাচের ১০১ মিনিটে ক্লান্ত এজিকুয়েল গ্যারে বদলে আর্জেন্টিনা কোচ  মাঠে নামান অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ম্যাক্সি রদ্রিগেজকে।

ম্যাচের ১১০ মনিটে ডাচ ডিফেন্ডার ডি ভ্রিজ ৩৫ গজ দূর থেকে গোল করার চেষ্টা করেন। তার জোরালো শট আর্জেন্টিনার গোলবারের ডান পাশ দিয়ে চলে যায়।

১১৬ মিনিটে ম্যাচে গোল করার সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন প্যালসিও। রদ্রিগেজের ক্রস ঠিক প্যালাসিওসের সামনে এসে পড়লেও খুব কাছ থেকেও হেড করেও গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি।

এরপর পরই আবারও গোল করার সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার পক্ষে। এবার ডাচদের বক্সের ভেতরে থেকে করা ম্যাক্সি রদ্রিগেজের দুর্বল শট সহজেই তালুবন্দী করেন গোলরক্ষ সিলেসেন।  

এর আগে নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই গোল করতে না পারায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচটি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৪৯ মিনিটে ডাচ ফরোয়ার্ড রোবেনকে অবৈধভাবে বাধা দেওয়ায় ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন মার্টিন ডেমিচেলিস।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলার ১০ মিনিটি পেরিয়ে গেলেও কোনো দলই গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় ম্যাচের ৫৬ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য রয়ে ‍যায় হল্যান্ড-আর্জেন্টিনা ম্যাচ।

ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত দু’দলই মধ্যমাঠের দখল নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। বল পজেশনে সমতায় থাকা দুদলই কাঙ্ক্ষিত গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থই রয়ে যায়।

৬২ মিনিটে ডাচ কোচ লুই ফন গাল তার দ্বিতীয় বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামান। নাইজেল ডি জংয়ের বদলি হিসেবে মাঠে নেমেন জর্ডি ক্লাসি।

গোলহীন খেলার ৭৫ মিনিটে গ্যালারিভর্তি দর্শক গোলের দেখা পান! কিন্তু না হিগুয়েনের সাইড নেটে লাগা শটকেই গোল ভেবে ভুল করেন দর্শকরা।

ম্যাচের ৮২ মিনিটে জোড়া বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামান আর্জেন্টিনার কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া। পেরেজের বদলি হিসেবে প্যালাসিও এবং হিগুয়েনের বদলি হিসেবে খেলতে নামেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো।

৮৭ মিনিটে গোলরক্ষক সিলেসেনের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পান আর্জেন্টাইন আগুয়েরে। কিন্তু ডিবক্সের ভেতরের বলটিতে শট করার আগেই ডাচ ডিফেন্ডার ভ্লার তা ক্লিয়ার করেন।

৯০ মিনিটে নির্ধারিত সময়ের শেষ বাঁশি বাজার আগে অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয় হল্যান্ড। গোলবারে কাছ থেকে নেওয়া রোবেনের শট মাশ্চেরানোর ‍পায়ে লেগে বারের পাশ দিয়ে চলে যায়।

এর আগে প্রথমার্ধে চব্বিশ বছর পর কাঙ্ক্ষিত ফাইনালের প্রত্যাশায় হল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়া ‍আর্জেন্টিনা ম্যাচের প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালের যেতে মরিয়া ডাচরাও কোনো গোল না পাওয়ায় বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথমার্ধ গোলশূন্য রয়ে যায়।

খেলার ২ মিনিটে বল নিয়ে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার লাভেজ্জি ডাচদের ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। কিন্তু হল্যান্ডের গোছানো রক্ষণভাগ তাকে প্রতিহত করেন।

ম্যাচের ৬ মিনিটে ডাচ মিডফিল্ডার স্নেইডার আর্জেন্টিনার বিপদজনক সীমানায় বল বাড়িয়ে দেন রোবেনের উদ্দেশ্যে। তবে জাবালেতা প্রস্তুত থাকায় কোনো বিপদ ঘটেনি।

ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির ফ্রিকিক রুখতে ডাচদের তোলা দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে জোরালো শট করেন লিওনেল মেসি। কিন্তু ডাচ গোলরক্ষক দারুণ দক্ষতায় বলটি তালুবন্দী করেন।

ম্যাচের ২৪ মিনিটে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পান লাভেজ্জি। কর্নার কিক থেকে শূন্যের বল ডিবক্সের ভেতরে পেয়েও হেড করে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি লাভেজ্জি।

এরপর ২৫ মিনিটে ডি জিংয়ের বাড়ানো বল আর্জেন্টিনার ডিবক্সের ভেতর পেয়ে যান ফন পার্সি কিন্তু সতর্ক এজেকুয়েল গ্যারে বলটি ক্লিয়ার করেন।

ম্যাচের ৩২ মিনিটে ডিভ্রিজের ভলিতে হেড করতে উদ্বত ফন পার্সিকে হতাশ করে পাঞ্চ করে বল ক্লিয়ার করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরো।

৩৬ মিনিটে আবারও ডান পাশ দিয়ে হল্যান্ডের বক্সের ভেতর ক্রস করেন লাভেজ্জি। কিন্তু তার বাড়িয়ে দেওয়া বল হিগুয়েনের কাছে পৌঁছানোর আগেই ডাচ ডিফেন্ডার ভ্লার ক্লিয়ার করে দেন।   এরপর ম্যাচের ৪৫ মিনিটে খেলায় প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ডাচ ডিফেন্ডার মার্টিন্স ইন্ডি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।