ময়মনসিংহ: ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ময়মনসিংহ পর্বের খেলা মাঠে গড়াচ্ছে আগামীকাল (শুক্রবার, ০৫ আগস্ট) থেকে। টানা দু’সপ্তাহ ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে ফুটবলপ্রেমীরা মেতে উঠবেন ফুটবলের উন্মাদনায়।
প্রায় এক যুগ আগে এ স্টেডিয়ামেই নিটল টাটা জাতীয় ফুটবল লিগের পর ব্রক্ষপুত্রপাড়ের এ নগরীতে বসতে যাচ্ছে ফুটবলের বড় এ আসর।
নতুনত্বের সমাহার নিয়ে শুরু হওয়া বিপিএল’র নবম আসরের ময়মনসিংহ পর্ব নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের নামকাওয়াস্তে প্রচারণা নিয়ে অবহেলা আর সমন্বয়হীনতায় ফুটবল অনুরাগীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
বিশেষ করে খেলা শুরু হবার আগেরদিন বৃহস্পতিবার (০৪ আগষ্ট) দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে হাইভোল্টেজ এ ফুটবল আসর নিয়ে নামমাত্র প্রচারণায় প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে খোদ সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকিকে।
সংবাদ কর্মীদের প্রশ্নের মুখে জেলা প্রশাসক দাবি করেন, ‘আমি ৫ দিন ঢাকায় ছিলাম। এ পর্বটি গত ১৬ জুলাই থেকে শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু এটি পিছিয়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। এখন পুরো শহরজুড়ে মাইকিং চলছে। বিভিন্ন থানায় মাইকিং করাতেও ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছি। ফুটবল ফেডারেশন থেকে ব্যানার-ফেস্টুন পরে আসাতেও সমস্যা হয়েছে। আমরা স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কেও প্রচারণা চালিয়েছি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকেও র্যালী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। ’
খেলা নান্দনিক হলে দর্শক বাড়বে। প্রতি দলে বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছেন। ময়মনসিংহবাসী বহুদিন পর চমৎকার ফুটবল ইভেন্ট উপভোগ করবে-যোগ করেন ডিসি।
দায়িত্বশীল মিডিয়ার বেশিরভাগ সংবাদকর্মীকেই জানানো হয়নি সংবাদ সম্মেলনের কথা। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও প্রচার-উপ কমিটি একে অপরকে দোষারোপও করছেন।
পেশাদার ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ এ আসর নিয়ে ময়মনসিংহের ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহেও ভাটার টান পড়েছে। শুধুমাত্র প্রচার-প্রচারণার অভাবেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার (০৪ আগষ্ট) দুপুরে আলাপ হচ্ছিল রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়াম সংলগ্ন তরুণ মুদি দোকানি জনি কুমার সাহার সঙ্গে।
তিনি জানান, ‘শহরের ভেতর বিপিএল নিয়ে প্রচারণা কম। এতোদিন পর ফুটবলের এতো বড় একটি টুর্নামেন্টের খেলা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় প্রচারণা অনেক কম। রিকশাযোগে বয়স্ক ও অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে মাইকিং করানোর ফলে ফুটবলের স্টাইলে তারা গুছিয়ে কথা বলতে পারছেন না। প্রথম দু’টি খেলা বন্ধের দিনে পড়েছে। এদিন হয়তো দর্শক হবে। কিন্তু পরের খেলাগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। ’
বিপিএল প্রচারণা নিয়ে অসন্তোষ ফুটে উঠেছে কয়েক জন শিক্ষার্থীর আড্ডাতেও। তাদেরই একজন নগরীর আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান সানজি। তার ভাষ্যে, ‘দু’এক জায়গায় মাইকিং শুনেছি। আর কয়েক জায়গায় ব্যানার ফেস্টুন দেখেছি। এমন প্রচারণা দর্শক টানতে পারবে না। ’
একই রকম আভাস পাওয়া যায় নগরীর টাউন হল মোড় এলাকা হয়ে জয়নুল উদ্যানে যাবার পথে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সৈকত আলী ও জান্নাতুল নাঈম রেশমার কন্ঠে।
সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়হীনতা ও নামমাত্র প্রচারণায় বিরক্ত রেশমা জানান, ‘ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের প্রচারণায় মাইকিং এর ছন্দময় বাক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আয়োজকরা এ বিষয়টি হয়তো মাইকওয়ালাদের শিখিয়ে দিতে পারেননি। মাইকিং’র নামে এখন তামাশা চলছে। ’
অবশ্য ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জাহান চৌধুরী শাহীন জানান, ‘রিকশাযোগে ২০ টি মাইক নামানো হয়েছে প্রচারণায়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। প্রচারণায় যে ঘাটতি ছিল সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। বিপিএল’র ময়মনসিংহ পর্ব দর্শকে ঠাসা থাকবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, আগষ্ট ০৪, ২০১৬
এমআরপি