চলতি মৌসুমে এই নিয়ে সর্বোচ্চ ২২ গোল করলেন মেসি। এবার সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার গোল হলো ৩০টি।
কাগজে-কলমে বার্সা ও ভায়াদোলিতের শক্তির পার্থক্য অনেক। কিন্তু গোল পেতে রেফারির পেনাল্টির বাঁশির অপেক্ষায় থাকতে হয় বার্সাকে। দুই দলের শক্তির পার্থক্য কতটা সেটা একটা পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা (বার্সা) দলের বিপক্ষে ১৫তম স্থানে থাকা (ভায়াদোলিদ) দলের লড়াই এটি। রিয়াল ভায়াদোলিদের সঙ্গে গত দশবারের দেখায় মাত্র একবার হেরেছিলো বার্সেলোনা, সেটাও ২০১৪ সালের মার্চের ঘটনা। আর ক্যাম্প ন্যুয়ে গত ৪২ বার খেলতে এসে মাত্র দুই বার জয় (ড্র ৬, হার ৩৪) নিয়ে ফিরতে পেরেছিলো ভায়াদোলিদ। শেষবার ১৯৯৭ সালে।
এদিকে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় বার্সেলোনা এই ম্যাচের প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। লা লিগার শীর্ষে থাকা বার্সা ঘরের মাঠে গত ২০টি লিগ ম্যাচে গোলের দেখা পেয়েছে (যার মধ্যে ১৫টিতে জয়, ড্র ৪ আর হার ১টিতে। আর ভায়াদোলিদ গত চার ম্যাচ ধরেই জয়ের মুখ দেখেনি (২ হার আর ২ ড্র)। আর সবচেয়ে বড় কথা ভায়াদোলিদের এই দলটির কোনো খেলোয়াড়ের ভাগ্যে বার্সার জাল ভেদ করার সৌভাগ্য হয়নি। এবারও অবশ্য এর ব্যত্যয় হয়নি।
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্প ন্যুয়ে ম্যাচের শুরু থেকেই মাঠে আধিপত্য দেখায় বার্সেলোনা। ম্যাচের ৯ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন বার্সার কেভিন প্রিন্স বোয়েটাং। বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগানের লম্বা কিক থেকে পাওয়া বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে এসি মিলানের সাবেক ফরোয়ার্ডের পায়ে পৌঁছে দেন মেসি। কিন্তু ভায়াদোলিদের রক্ষণে পরাস্ত হয় বোয়েটাংয়ের শট।
৪১ মিনিটে ফের সুযোগ আসে বার্সার সামনে। এবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে শট পরাস্ত হলে ফিরতি শট নেন বার্সা অধিনায়ক। কিন্তু ভায়াদোলিদের ডিফেন্ডার সালেরোর পায়ে লেগে বল জালের নিশানা মিস করে। তবে অপেক্ষার পালাটা দীর্ঘ হয়নি। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার ২ মিনিট আগে পেনাল্টি পেয়ে যায় বার্সা।
৪২ মিনিটে ভায়াদোলিদের দারুণ এক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন নাচো। পাল্টা আক্রমণে উঠে আসে বার্সা। মেসির প্রচেষ্টা রুখে দেয় ভায়াদোলিদের রক্ষণ, ফাঁকায় বল পেয়ে যান জেরার্ড পিকে। কিন্তু নিজেদের ডি-বক্সে তাকে ফাউল করে বসেন ভায়াদোলিদের ডিফেন্ডার মাইকেল। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। গোলবারের ডান প্রান্ত দিয়ে নিখুঁত নিচু শটে গোল করতে ভুল করেননি মেসি।
শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে গোল শোধ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ভায়াদোলিদ। কিন্তু দলটির ফরোয়ার্ড উনালের শট কোনোমতে বিপদ মুক্ত করেন বার্সা ডিফেন্ডার পিকে। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করেন মেসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ফের আক্রমণের ধার বাড়ায় বার্সেলোনা। ৫৩ মিনিটে ভায়োদালোদের রক্ষণ ভেদ করেছিলেন উসমান ডেম্বেলে। এরপর বল বাড়িয়েছিলেন মেসির পায়ে। প্রথম ছোঁয়াতেই শট নিয়েছিলেন মেসি, কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হয় তার শট। ৫৫ মিনিটেও সুযোগ নষ্ট করে কাতালান জায়ান্টরা। এবার মিসের কাতারে যোগ দেন বোয়েটাং। বল পায়ে নিয়ে কারিকুরি করতে গিয়ে শট নিতে দেরি করে ফেলেন তিনি। আর এই সুযোগ এগিয়ে এসে তাকে প্রচেষ্টা বৃথা করে দেন ভায়াদোলিদের গোলরক্ষক।
৬৬ মিনিটে ফের বার্সাকে গোলবঞ্চিত করেন ভায়াদোলিদের গোলরক্ষক। গোলপোস্টের একদম কাছ থেকে শট নিয়েছিলেন বোয়েটাংয়ের বদলি হিসেবে নামা লুইস সুয়ারেজ। কিন্তু অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় পা দিয়ে সেই শট ঠেকিয়ে দেন মাসিপ। যদিও বল মেসির পা খুঁজে নিয়েছিল, কিন্তু তার দুর্বল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এক মিনিট পরেই হলুদ কার্ড দেখেন মেসি। যদিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে তাকেই উল্টো ফাউল করেছিলেন ভায়াদোলিদের ডিফেন্ডার। মেসি আপিলও করেছিলেন। কিন্তু রেফারি অনড়। এর জবাব অবশ্য ৭ মিনিট পরেই দিতে পারতেন মেসি। সুয়ারেজ ক্রস করে তার পায়ে বল পাঠিয়েছিলন। বলটা সার্জি রবার্তোর পায়ে পাঠালেই কাজ হয়ে যেতো। কিন্তু দ্বিধায় পড়ে বল পাঠান মেসির দিকে।
৭৮ মিনিটে রবার্তোকে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন মেসি, কিন্তু ডি-বক্সের ২০ গজ দূর থেকে শট নিলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি স্প্যানিশ তারকা। ৮৪ মিনিটে ফের পেনাল্টি পেয়ে যায় বার্সা। সুয়ারেজের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় এগুচ্ছিলেন বদলি হিসেবে নামা ফিলিপ্পে কৌতিনহো, কিন্তু তাকে আটকাতে গিয়ে নিজেদের ডি-বক্সে ফেলে দেন ভায়াদোলিদের অলিভাস। পেনাল্টি পায় বার্সা। কিন্তু মাসিপকে হারিয়ে দিলেও বল লক্ষ্যের বাইরে চলে যায়, বিরল এক মুহূর্তের জন্ম দিয়ে পেনাল্টি মিস করেন মেসি।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে শেষ সুযোগটাও নষ্ট করে বার্সা। এবার সুয়ারেজকে বল বানিয়ে দেন মেসি। উরুগুইয়ান তারকার দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন পুরো ম্যাচের আসল নায়ক, কিন্তু পরাজিত দলের সদস্য হওয়ার কষ্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া মাসিপ। একটা কথা না বললেই নয়, এই মাসিপ কিন্তু বার্সার সাবেক ঘরের ছেলে।
নুন্যতম ব্যবধানের এই জয়ে ২৪ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষেই রইলো বার্সেলোনা। একইদিন রায়ো ভায়োকানোকে ১-০ গোলে হারিয়ে ২৪ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে স্থান করে নিয়েছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। অ্যাথেলেটিকোর জয়ে একধাপ পিছিয়ে তিনে নেমে যাওয়া রিয়ালের পয়েন্ট ৪৫। অন্যদিকে ২৪ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে ভায়াদোলিদ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমএইচএম